দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েই হলেন CEO! তৈরি করেছেন নিজের ব্র্যান্ডও, নজির গড়লেন কেরালার এই মহিলা

Published on:

Published on:

Francy's amazing Success Story will amaze you.
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কেরালার ত্রিশূর জেলার করালাম গ্রামের মহিলা উদ্যোক্তা ফ্র্যান্সি জোশিমন অর্গানিক ফুড প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে এক সফল (Success Story) স্টার্টআপ গড়ে তুলে দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পরিবারের এক কঠিন সময়—২০১৮ সালে তাঁর বাবার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া—তাঁকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব বোঝায়। বাজারে পাওয়া খাদ্যে থাকা ক্ষতিকর পেস্টিসাইড, কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভের কারণে রোগ বাড়ছে—এই উপলব্ধি থেকেই ফ্র্যান্সির মনে নতুন সংকল্প জন্ম নেয়। ২০১৯ সালে বাবাকে হারানোর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, মানুষের জন্য এমন খাবার তৈরি করবেন যা হবে সম্পূর্ণ নিরাপদ, পুষ্টিকর ও প্রিজারভেটিভ-মুক্ত। মাত্র দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেও এই সংকল্পই তাঁর উদ্যোক্তা জীবনের ভিত্তি হয়ে ওঠে।

ফ্র্যান্সি জোশিমনের অসাধারণ সফলতার কাহিনি (Success Story):

ফ্র্যান্সি জোশিমন তাঁর মেয়ের নামে শুরু করেন ‘মিন্নাস ফ্রেশ ফুড প্রোডাক্টস’। শুরুতে বাড়িতে তৈরি কাটাহল পুট্টু পাউডার ও কিছু মৌলিক অর্গানিক খাবার স্থানীয় বাজারে ও পরিচিতদের কাছে বিক্রি করতেন। পণ্যের স্বাদ, মান এবং অর্গানিক গুণাগুণ দ্রুত সাড়া ফেলতে শুরু করে। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্র্যান্সি ও তাঁর স্বামী আরও বেশি করে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা নিজেদের সঞ্চয়ের পাশাপাশি মেশিন ও উৎপাদন সরঞ্জাম কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন। ড্রায়ার, রোস্টার, পালভারাইজার ও ব্লেন্ডারসহ একটি সম্পূর্ণ উৎপাদন ইউনিট তৈরি করে ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী-চালিত এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। পাশাপাশি পুট্টু আটা দীর্ঘদিন নরম ও স্বাদযুক্ত রাখা যায় কিভাবে সেই বিষয়েও তাঁরা কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করেন (Success Story)।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? নির্বাচনের ঘোষণার আবহেই এই ৪ নাম নিয়ে জোর চর্চা

মিন্নাস ফ্রেশ ফুড বর্তমানে ছয় ধরনের পুট্টু পাউডার—যেমন কাঁঠাল মিক্স, ট্যাপিওকা মিক্স, কাঁচা কলা মিক্স—তিন ধরনের গম আটা, শিশু খাদ্য, এবং রান্নার নানা প্রয়োজনীয় মশলা সরবরাহ করছে। তবে তাঁদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য কাঁঠাল-ভিত্তিক খাদ্যদ্রব্য। কাঁঠালে প্রচুর প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং ক্যারোটিনয়েড থাকার ফলে এটি ক্যানসার, হৃদরোগ, ও চোখের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। ২০১৮ সালে কাঁঠালকে কেরালার ‘রাষ্ট্র ফল’ ঘোষণা করা হলে এই ফলের প্রসেসিংয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং মিন্নাস ফ্রেশের বাজারও দ্রুত প্রসারিত হয়। গুণমানের প্রতি কঠোর মনোযোগ রেখে ফ্র্যান্সি সব কাঁচামাল সংগ্রহ করেন স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে এবং ধোয়া, শুকানো থেকে শুরু করে প্যাকেজিং পর্যন্ত সব ধাপে কঠোর মান বজায় রাখেন (Success Story)।

শুরুর দিকে বাজারজাতকরণ ও স্বল্প শেল্ফ লাইফের সমস্যার মুখোমুখি হলেও কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় মিন্নাস দ্রুত তা কাটিয়ে ওঠে। বর্তমানে এই স্টার্টআপে ১৬ জন কর্মী কাজ করেন, যাদের অধিকাংশই কুদুম্বশ্রী মহিলাদের সদস্য। ফ্র্যান্সি তাঁদের প্রতি মাসে ৮৫০০ টাকার বেশি বেতন ও বীমা সুবিধা প্রদান করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলছেন। এতে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে এবং তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে (Success Story)।

Francy's amazing Success Story will amaze you.

আরও পড়ুন:বিনিয়োগে জাদু! নিয়মিত মাসিক SIP-এ ১ কোটি পেতে কত টাকা প্রয়োজন? দেখে নিন হিসেব

বর্তমানে মিন্নাস ফ্রেশ ফুডের পণ্য কেরালার সরকারি আউটলেট, অ্যাগ্রো হাইপার বাজার, কুদুম্বশ্রী ও সাপ্লাইকোতে বিক্রি হয়। পাশাপাশি, সংযুক্ত আরব এমিরেটেও পণ্য রপ্তানিও শুরু হয়েছে, এবং সেখানে চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। ফ্র্যান্সি জোশিমনের এই উদ্যোগ শুধু ব্যবসা নয়, বরং এক সামাজিক আন্দোলনও—যেখানে নিরাপদ খাবার উৎপাদনের পাশাপাশি নারী কর্মসংস্থান, কৃষকের উন্নতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ একসঙ্গে এগিয়ে চলছে (Success Story)।