বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্কঃ চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ৭৭, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১২৪ এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৯৮, আইপিএল ২০২৩-এর (IPL 2023) মঞ্চে পাদপ্রদীপের আলো বাকি তরুণ ক্রিকেটারদের থেকে আচমকাই যেন কেড়ে নিয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের (Rajasthan Royals) যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। তার সামনে রাজস্থানের অপর তারকা ওপেনার জস বাটলার (Joss Buttler) যেন ফিকে হয়ে গিয়েছেন। অবিলম্বে তাকে ভারতীয় দলে শুভমান গিলের সঙ্গে জুটি বাঁধতে দেখতে চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
চার বছর আগে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে (Under 19 World Cup 2020) দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে সকলের নজরে এসেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারত ফাইনালে হারলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি অসাধারণ শতরান সহ টুর্নামেন্টে ৪০০ রান করে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছিলেন তিনি। এরপর তার প্রতিভা দেখে আইপিএলের অন্যতম সফল দল রাজস্থান রয়্যালস তাকে সুযোগ দেয়। ২০২০ সালে তার আইপিএল অভিষেক ঘটে। কিন্তু এই বছর প্রকৃত অর্থে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে। তরুণ ভারতীয় বাঁ-হাতি ওপেনার এই আইপিএলে এতটাই মারাত্মক ব্যাটিং করছেন যে তার সামনে যস বাটলারের মত অভিজ্ঞ তারকাকে কিছুটা ফিকে দেখাচ্ছে। আইপিএলের গ্রূপপর্ব শেষ হওয়ার আগেই ১৫০-র বেশি স্ট্রাইক রেটে তিনি ৫৬৫ রান করে ফেলেছেন তিনি। ভারতের মাটিতে ওডিআই বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) বছরে এমন পারফরম্যান্স তার ভাগ্য ঘুরিয়ে দিতে পারে আচমকাই।
তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই মুহূর্তে আইপিএলে অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে থাকা এই যশস্বীর যাত্রার শুরুটা একেবারেই সহজ ছিল না। তিনি একটি অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন এবং একসময় মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানের বাইরে ফুচকা এবং ফল বিক্রি করে জীবিকা অর্জন করতেন তিনি। একাধিক দিন তাকে খালি পেটে ঘুমাতে হয়েছে কম বয়সে। উত্তর প্রদেশের ভাদোহি গ্রামে জন্মগ্রহণ করা যশস্বী মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে মুম্বাই রওনা দিয়েছিলেন। আজাদ ময়দানের খ্যাতনামা কোচ ইমরান তার প্রতিভা দেখে তাকে জানিয়েছিলেন সে মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাবের হয়ে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারলে তাকে ক্লাব তাঁবুতে থাকার জায়গা দেওয়া হবে।
একদিকে ক্রিকেট অনুশীলন এবং ভালো পারফরম্যান্স নিয়মিত করার চাপ, একদিকে ফুচকা বিক্রি, আর এক দিকে ক্লাবের মালিদের অত্যাচার, সব মিলিয়ে কয়েকটা বছর অসহনীয় পরিশ্রম করতে হয়েছিল এই বাঁ-হাতি ক্রিকেটারকে। তবে তিনি জানিয়েছেন এই সময়টা তাকে মানসিকভাবে শক্ত করেছিল। রান্না না করলে ওই তাবুর মালিক এবং তার সঙ্গীরা তাকে মারতো বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি একটি পুরোনো ভিডিওতে। কিন্তু ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ভারতীয় স্কোয়াডে সুযোগ পেয়ে সাফল্য পাওয়ার পরেই তার জীবনটা পুরোপুরি বদলে যায়।
সম্প্রতি কেকেআরের বিরুদ্ধে তার ১৩ বলে রেকর্ড গড়ে অর্ধশতরানের ইনিংস দেখে বিরাট কোহলির পাশাপাশি সুরেশ রায়নাও তার উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন। রাজস্থান রয়্যালসের এই তরুণ ওপেনারের ব্যাটিং তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বীরেন্দ্র সেওবাগের ব্যাটিংয়ের কথা। তিনি জানিয়েছেন তিনি যদি নির্বাচিত হতেন তাহলে বিশ্বকাপের বছরে অবশ্যই যশস্বীকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতেন। তিনি জানিয়েছেন তিনি এটাও বিশ্বাস করেন যে রোহিত শর্মা তার এই পারফরম্যান্সের ওপর নজর রাখবে।