বাংলা হান্ট ডেস্ক: শেষ হয়ে গেল ভারতের মঙ্গলযান (Mangalyaan) সফর। পাশাপাশি, ফুরিয়ে গিয়েছে মঙ্গলযানের আয়ু। জানা গিয়েছে, মঙ্গলযানে থাকা জ্বালানি ও ব্যাটারি ইতিমধ্যেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। আর এর ফলেই মঙ্গলযান অর্থাৎ মার্স অরবিটার মিশন (Mars Orbiter Mission-MOM)-এর আট বছর আট দিনের যাত্রা শেষ হল। উল্লেখ্য যে, এই মিশনটি ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি, এটি ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছে যায়। মূলত, এই মিশনের মাধ্যমে, ভারত প্রথম পদক্ষেপেই সরাসরি মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। বিশ্বের আর অন্য কোনো দেশের কাছে এই নজির নেই।
মঙ্গলযান মিশনের খরচ ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। অথচ এই টাকায় বর্তমানে সিনেমা তৈরি হয়। এদিকে, ISRO সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে যে, মঙ্গলযানে এখন আর কোনো জ্বালানি অবশিষ্ট নেই। সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, মহাকাশযানের ব্যাটারিও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে মঙ্গলযানের সাথে যোগসূত্রও ভেঙে গিয়েছে। যদিও, এই প্রসঙ্গে অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে কোনো তথ্য জানায়নি ISRO।
পাশাপাশি, ISRO-র এক নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আধিকারিক জানিয়েছেন যে সম্প্রতি মঙ্গলে ক্রমাগত গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহণ ছিল সাড়ে সাত ঘণ্টার। এখানে গ্রহণ মানে এই নয় যে, মহাকাশযানটি মঙ্গল গ্রহের পিছনে চলে গেছে। বরং, এর মানে হল, মঙ্গলযানের ব্যাটারি সূর্যগ্রহণের সময় অর্থাৎ সূর্যালোক ছাড়া মাত্র এক ঘন্টা ৪০ মিনিট স্থায়ী হতে পারে। আর এরপরেই এটি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মঙ্গলযান তার নির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি সময় যাবৎ সচল ছিল: এই প্রসঙ্গে ISRO কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, “মঙ্গলযান তার নির্ধারিত বয়সের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি সময় যাবৎ সচল ছিল। পাশাপাশি, সেটি এমন কিছু ছবি ও তথ্য দিয়েছে যা পৃথিবী এবং মঙ্গল সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মঙ্গলযান পাঠিয়েছিল শুধুমাত্র প্রযুক্তিটি প্রদর্শনের জন্য। কিন্তু আমাদের মঙ্গলযান এত বড় কাজ করেছে যা আজ পর্যন্ত কোনো দেশের মহাকাশযান করতে পারেনি।”
এই পাঁচটি পেলোডস সমগ্র বিশ্বকে অবাক করেছে: মঙ্গলযান অর্থাৎ মার্স অরবিটার মিশনে (MOM) পাঁচটি পেলোডস (Payloads) ছিল। যাদের ওজন ছিল মাত্র ১৫ কেজি। তাদের কাজ ছিল মঙ্গল গ্রহের ভৌগোলিক, বাইরের স্তর, বায়ুমণ্ডলীয় প্রক্রিয়া ও পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অনুসন্ধান করা। এতে থাকা পাঁচটি পেলোডসের নাম ছিল মার্স কালার ক্যামেরা, থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার, মিথেন সেন্সর ফর মার্স, মঙ্গল এক্সোস্ফিয়ারিক নিউট্রাল কম্পোজিশন অ্যানালাইজার এবং লেহম্যান আলফা ফটোমিটার (LAP)।
কেন ISRO-র মঙ্গলযান মিশন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল: মঙ্গলযান মিশনটি খুব অল্প খরচে এবং কম সময়ে সম্পন্ন হয়েছিল। পাশাপাশি, পাঁচটি পেলোডসকে একত্র করে তাদের কাজে লাগানোটাও একটা বিরাট পদক্ষেপ ছিল। সর্বোপরি, মঙ্গলযানের মার্স কালার ক্যামেরা থেকে তোলা ১,০০০ টিরও বেশি ছবি থেকে মার্স অ্যাটলাস তৈরি করা হয়েছে।
ফের লঞ্চ করা হতে পারে “মঙ্গলযান-২”: অনুমান করা হচ্ছে যে, ISRO ইতিমধ্যেই “মঙ্গলযান-২” নিয়ে ভাবছে। কিন্তু এখনও এই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বর্তমানে, ISRO-র পুরো মনোযোগ রয়েছে মানব মিশন গগনযানের দিকে। ২০১৬ সালে, ISRO কর্মকর্তারা অ্যানাউন্সমেন্ট অফ অপরচুনিটি (AO) নিয়ে এসে জানান যে, তাঁরা দ্বিতীয় মঙ্গল অভিযানের ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য মেলেনি। যদিও, এর পরে ISRO গগনযান, চন্দ্রযান-৩ এবং আদিত্য এল-১ মিশনের প্রসঙ্গ জানায়। অ্যানাউন্সমেন্ট অফ অপরচুনিটি অনুযায়ী, ভবিষ্যতে মঙ্গলযান-২ মিশনের পরিকল্পনা করা হবে। তবে আপাতত এই বিষয়ে কোনো প্রসঙ্গ উঠে আসছে না।