বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রবিবার মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। (Garden Reach Building Collapse)। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, নির্মিয়মান বহুতল ভেঙে এখনও পর্যন্ত মোট ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে এখনও আটকে থাকার আশঙ্কা আরও কিছুজনের। ওই বহুতল যে বেআইনিভাবে নির্মাণ হচ্ছিল ইতিমধ্যেই তা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরেই গার্ডেনরিচ কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে। গার্ডেনরিচ বিপর্যয়ের প্রায় আট ঘণ্টা পর মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসি-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। সূত্রের খবর, প্রোমোটারের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, বাড়ি তৈরিতে গাফিলতি, স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতি সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় কলকাতার মেয়র তথা স্থানীয় বিধায়ক ফিরহাদ হাকিমকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। খাস কলকাতার মত জায়গায় কী করে রমরমিয়ে চলছে অবৈধ নির্মাণ? প্রশাসনের ভূমিকা কী? এমনই হাজার প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রশ্ন উঠছে ধৃত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে নিয়েও। কে এই ওয়াসিম? অনুমোদন ছাড়াই এলাকায় বহুতল বানিয়ে ব্যবসা? কার হাত রয়েছে এই প্রোমোটারের মাথায়?
সূত্রের খবর, রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ ওয়াসিম। প্রথম জীবনে নাকি তিনি দুধের ব্যবসা করতেন। তারপর হঠাৎই পরিবহণে যোগ। আর তারপর একলাফে গার্ডেনরিচ এলাকায় নির্মাণের ব্যবসা শুরু। বেশ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে রমরমিয়ে চলছিল তার নির্মাণের ব্যবসা। সামান্য দুধ ব্যবসায়ী থেকে এলাকার দাপুটে প্রোমোটার হয়ে ওঠেন এই ওয়াসিম।
তবে ব্যবসায়ী ওয়াসিমের ব্যবসার পরিধি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ার মার্কেটে টাকা ঢালতেন তিনি। স্ত্রীর নামে জামাকাপড়ের ব্যবসাও খুলেছিলেন প্রোমোটার। আর এই ওয়াসিম শাসকদলের বেশ ঘনিষ্ঠ বলেও তথ্য সামনে আসছে। জানিয়ে রাখি, বর্তমানে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবালের ব্যবসা দেখভাল করতেন ওয়াসিম। শাসকদলের নেতাদের সঙ্গেই নাকি ওঠাবসা ছিল তার। টানা ন’বছর নাকি জেলেও ছিলেন এই প্রোমোটার।
আরও পড়ুন: ক্লাস নেওয়ার সময় নো মোবাইল! শিক্ষকদের ছুটিতেও কড়াকড়ি, বিচারপতি বসুর ভিজিটেই অ্যাকশন
গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে নিরপরাধ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবালের গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রাম বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। কোন প্রভাবশালীর মদতে ওয়াসিমের এত বাড়বাড়ন্ত উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
বেআইনি ভাবে নির্মাণের কথা কার্যতই স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতার মেয়র তথা মমতার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে বামেদের ওপর দোষ চাপিয়ে মেয়রের দাবি, সিপিএম জামানা থেকেই এখানে বেআইনি নির্মাণ চলছে। তবে তৃণমূল জামানায় এসে সব জেনেও ফিরহাদ কেন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না সেই বিষয়ে অবশ্য কারও জানা নেই। উল্টে স্থানীয় কাউন্সিলরকে দোষ দিতে নারাজ ফিরহাদ। মেয়রের কথায়, ‘‘কোন গলিতে বেআইনি ভাবে কী তৈরি হচ্ছে, সেটা কাউন্সিলরের জানা সম্ভব নয়।” হ্যাঁ ঠিকই তো!