বাংলাহান্ট ডেস্ক: গীতা দে (gita dey), ইন্ডাস্ট্রির এক সময়কার প্রিয় গীতা মা। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন পর্দায়, থিয়েটারের মঞ্চে। কয়েকশো বাংলা ছবি রয়েছে তাঁর ঝুলিতে, বহু জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। সে সময় ছবিতে খলনায়িকা মানেই গীতা দে। কিন্তু বাস্তবে জীবনটাই তাঁর সঙ্গে ছলনা করে এসেছিল বরাবর। আঘাত দিয়েছিল একের পর এক।
১৯৩১ এ তৎকালীর ব্রিটিশাধীন কলকাতার দর্জি পাড়ায় জন্ম গীতা দের। বাবা ছিলেন নামকরা চিকিৎসক। কিন্তু বাবা মায়ের কাছে বেশিদিন সুখভোগ করতে পারেননি তিনি। তাঁর যখন মাত্র পাঁচ কী ছয় বয়স তখনি আলাদা হয়ে যান তাঁর বাবা মা। বিবাহ বিচ্ছেদের সময়ে মায়ের কাছেই থাকার বায়না ধরেছিলেন গীতা দে।
অভাবের কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। মা রেণুবালা দেবী অবশ্য নতুন বিয়ে করেছিলেন পরে। কিন্তু সৎ বাবা কোনো দায়িত্বই নিতে চাননি তাঁদের। উলটে তিনি গীতা দে কে বাধ্য করেন অভিনয় জগতে আসতে। মা রেণুবালার সঙ্গে মিলে থিয়েটারে কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্র ছয় বছর।
গীতা দের আগের বাড়ির পাশেই থাকতেন সে সময়কার জনপ্রিয় গায়িকা রাধারাণী দেবী। তিনিই প্রবোধ গুহর কাছে কাজের সুযোগ করে দেন গীতা দে কে। পারিশ্রমিক পেতেন মাত্র পাঁচ টাকা। সে টাকাতেই চলত সংসার। সে সময় কালিন্দী নাটকের গান গেয়ে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। তারপর নাট্য ভারতীতে এসে দুই পুরুষ নাটকে ছোট মমতার চরিত্রে অভিনয় করেন গীতা দে।
সময় একটু ভাল হতে না হতেই ফের দুঃসময় শুরু হয় তাঁর জীবনে। গীতা দের যখন চোদ্দ পনেরো বছর বয়স তখন প্রয়াত হন তাঁর মা। বন্দনা দেবী তাঁর মায়ের জায়গা নিয়েছিলেন তখন। তিনি গীতা দের পরিচয় করান শিশির ভাদুড়ীর সঙ্গে। তাঁকেই চিরকাল অভিনয়ের গুরু বলে মেনে এসেছেন গীতা দে।
থিয়েটারে থাকতে থাকতেই অসীম দের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির আদর পাননি কখনো। অভিনয় করতেন বলে শাশুড়ির বিষনজরে পড়েছিলেন গীতা দে। এমনকি তাঁকে লুকিয়ে ছেলের আবার বিয়েও দিয়েছিলেন তিনি। শ্বশুরবাড়ি থেকে সন্তান ও দুই ভাই বোনকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন গীতা দে। এতকিছুর পরেও আজীবন স্বামীর পদবীই বয়ে বেরিয়েছেন তিনি, স্বামীর নামের সিঁদুর পড়েছেন।
জীবনে হাজারো কষ্টের সম্মুখীন হলেও কখনো অভিনয় ছাড়েননি গীতা দে। নিজের কষ্ট লুকিয়ে অভিনয় করেছেন খলনায়িকার চরিত্রে। ডাইনি, মৌচাক, সাথী হারা, পুত্রবধূ, পিতা পুত্র, হাটে বাজারে, মেঘে ঢাকা তারা, তিন কন্যা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, মর্জিনা আব্দুল্লাহ, মেম সাহেব, আক্রোশ, ঝংকার, জতুগৃহ, দেবিপক্ষের মতো ছবিতে অভিনয় প্রতিভা দেখিয়েছেন। গীতা দের সম্পর্কে এক বিদেশি পরিচালক বলেছিলেন, “ইউরোপ বা আমেরিকায় জন্মালে অবশ্যই অস্কার পেতেন।”