বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গরু পাচার মামলায় দীর্ঘদিন জেলবন্দি বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। যার দাপটে একসময় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, তাঁর এখন জীবন কাটছে জেলের চার দেওয়ালের ভেতরে। অনুব্রতর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মী সায়গল হোসেনও (Saigal Hossain) বর্তমানে জেলবন্দি। এই আবহেই জানা গেল, প্রভাবশালীদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কোনও পুলিশকর্মীকে না রাখার ভাবনায় রাজ্য সরকার (Government of West Bengal)!
দীর্ঘদিন বীরভূমের তৃণমূল প্রাকন সভাপতি অনুব্রতর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন সায়গল। সেই যোগাযোগকে হাতিয়ার করে প্রচুর দুর্নীতিও (Scam) করেন তিনি। অনুব্রতর পাশাপাশি একাধিক দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে এই পুলিশকর্মীর। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কোনও নেতা, মন্ত্রী অথবা বিশেষ পরিচয়সম্পন্ন ব্যক্তির নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দীর্ঘদিন কোনও পুলিশকর্মীকে না রাখার প্রস্তাব জমা পড়লো স্বরাষ্ট্র দফতরে।
নয়া এই প্রস্তাব অনুসারে, কনস্টেবল থেকে প্রোমোশনের পর এএসআই হয়ে যাওয়ার পর সকল পিএসও-কে (PSO) ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের দিয়ে অন্যান্য নানান ডিউটি করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই বিষয়ে নবান্নের (Nabanna) তরফ থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ এলেই এই নয়া প্রস্তাব কার্যকর হয়ে যাবে। পিএসও-দের বিরুদ্ধে ওঠা নানান অভিযোগ একেবারে গোড়া থেকে মেটাতেই এই নতুন প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
আরও পড়ুনঃ সুদীপ অতীত, এবার সোজা অভিষেককে আক্রমণ? কুণাল ঘোষ লিখলেন, ‘’অপদার্থ’ ও ‘দলবিরোধী’…’!
এদিকে অনুব্রত-সায়গলের ঘটনার পর প্রশাসনের তরফ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই রাজ্যের একাধিক নেতা, মন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ, বিধায়কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বহু পিএসও। রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদাধিকারী পুলিশকর্মীদেরই এই দায়িত্ব দেওয় আহয়। বহুবার এমনও দেখা গিয়েছে, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগের দিন অবধি পিএসও-রা এই কাজে থেকে গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সময়টা দুই থেকে আড়াই দশকও হয়ে যায়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে সুরক্ষার দায়িত্বে থাকায় প্রভাবশালীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয়ে যায় পিএসও-দের। রাজ্যের একাধিক হেভিওয়েটের নানান কাজ তাঁদেরকেই সামলাতে দেখা যায়। এদিকে অনেক সময় প্রভাবশালীদের সঙ্গে এই ‘ঘনিষ্ঠতা’কে কাজে লাগিয়ে অনেকে ফুলেফেঁপে ওঠেন। পিএসও-দের বিরুদ্ধে একাধিক সময় একাধিক অভিযোগও উঠেছে। অনেক সময় তো প্রভাবশালীদের চোখের আড়ালে নানান ধরণের আর্থিক দুর্নীতি চালানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
জানা যাচ্ছে, অনুব্রত-সায়গলের ঘটনার পরেই পিএসও-দের কাজকর্ম নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরে পর্যালোচনা শুরু হয়েছিল বলে খবর। গত বছরই এই বিষয়ে সুষ্ঠু নীতি তৈরির প্রস্তাব বানানোর কাজ শুরু হয়। এবার সেই প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গ আকারে স্বরাষ্ট্র দফতরে জমা পড়ল বলে খবর। তবে বর্তমানে রাজ্যে যেহেতু লোকসভা নির্বাচন চলছে, তাই এখনই এই প্রস্তাবে শিলমোহর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ৪ জুন ভোট মিটে গেলেই এই বিষয়ে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হতে পারে।