বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই সরব রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় ফিরতে রাজ্যে শুরু হয় ভোট পরবর্তী হিংসা। মৃত্যু হয় প্রায় কুড়ি জন রাজনৈতিক কর্মীর। এ নিয়ে প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে আসছেন রাজ্যপাল। এমনকি তার শপথ গ্রহণের দিনেও তাকে বোন বলে সম্বোধন করে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করে দেন তিনি।
এরপর যখনই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন রাজ্যপাল, ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন তিনি। এমনকি তাকে আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এরপরই বিএসএফের হেলিকপ্টারে শীতলকুচি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শীতলকুচিতে পরিস্থিতি দেখে মোটেই আশ্বস্ত হতে পারেননি রাজ্যপাল। পুলিশ কর্তাদের ধমকধামক দেওয়া তো বটেই পুলিশকে দলদাস বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সফরের পর টুইট করে তিনি লেখেন, ওদের সমস্ত কাহিনী শুনে আমার চোখে রীতিমতো জলে এসে যাচ্ছিলো। আমি ভাবতেও পারছিনা মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগের এমন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই নন্দীগ্রামে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর উপর আক্রমণ চলছে বলে অভিযোগ করে আসছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এরপরে এদিন ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নন্দীগ্রামের যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। নন্দীগ্রাম পৌঁছতে তাকে নিজের চোখে সমস্ত কিছু দেখতে আহ্বান জানান শুভেন্দুও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল।
মুখ্যমন্ত্রী ঘুম থেকে উঠুন, এভাবেই কড়া ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রন্ত। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কী করেছেন? শীতলকুচিতে আপনি কোনও কিছু করতে বাকি রাখেননি। আপনি গণহত্যা বলেছেন। ঠান্ডা মাথায় খুন বলেছেন। আপনি ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। আপনি দ্রুত পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করেছেন। আপনি কি এই লক্ষ লক্ষ মানুষের যন্ত্রণা দেখেছেন? সেই সময় মেয়েদের দেখেছেন যাদের ধর্ষণ করা হয়েছে? যাদের বাড়ির লোকের মৃত্যু হয়েছে?”
শুধু তাই নয় দিন সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি পরিষ্কার জানান এভাবে চলতে থাকলে সংবিধানে রাজ্যপালের হাতে একটি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা ব্যবহার করতে তিনি বাধ্য হবেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী সচেতন হোন এবং যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে পদক্ষেপ করুন। তিনি বলেন, “ভারতের সংবিধানে একটা ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে বাধ্য করবেন না। ঘুম থেকে উঠুন। রাষ্ট্র দ্বারা আয়োজিত সমর্থিত এই নৃশংস হিংসাকে রুখুন।”
রাজ্যকে এভাবে সরাসরি হুঁশিয়ারি দেওয়ার ইতিহাস সম্ভবত অতীতে সেভাবে নেই। একথা ঠিক যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিপুল ভোটে জয়লাভ করে রাজ্য তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ভোট পরবর্তী হিংসায় একজন নাগরিকের প্রাণ হারানোও কখনো মেনে নেওয়া যায় না। এদিন রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, সেই কথারই রেশ। এখন আগামীতে এই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত কোন দিকে গড়ায় সে দিকেই নজর থাকবে সকলের। তবে রাজনৈতিকভাবে রাজ্যপালের এই সফর যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।