স্বপ্ন প্রিয়া ঘোষাল: বাঙালি শুধু নয়, সমগ্র ভারতীয় জাতির একটি বড় আবেগ, নাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। আর শেষ জীবনে তার অন্তর্ধান নিয়ে এখনও পর্যন্ত ভারতবাসীর আবেগ সক্রিয়, তার সাথেই নাড়া দিয়ে যায় নানান প্রশ্ন, রহস্য ও কৌতুহল।সত্যিই কি স্বাধীনতার এই নায়ক ১৯৪৫ সালের ১৮ ই সেপ্টেম্বর প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন? রয়ে গেছে রহস্য। নেতাজী সভাষচন্দ্র বসুর এই আন্তর্ধানকে ই এবার তুলে ধরলেন বাংলার অন্যতম সফল পরিচালক সৃজিত বসু তার ছবি গুমনামী তে। ছবির প্রতিটি দৃশ্যের পেছনে ছবির সাথে যুক্ত মানুষদের পরিশ্রম ফুটে ওঠে।
গুমনামি ছবিটি তে নেতাজির অন্তর্ধান এর রহস্য সমাধানের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা তিনটি কমিটির (শাহনওয়াজ(১৯৫৬), খোসলা (১৯৭০) এবং মুখার্জি(১৯৯৯)) তথ্য বারবার তুলে ধরা হয়েছে দর্শকদের সামনে। ছবির গল্প শুরু হয় এমন একটা সময়ের ইতিহাস তুলে ধরে যখন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা প্রায় এসে উপস্থিত। সেইখান থেকে প্লেনে আগুন এবং নেতাজির মৃত্যু, পুরো ঘটনাটা ই রহস্যে মোড়া। আর এই রহস্য অনুসন্ধানের দায়িত্ব এসে পরে সাংবাদিক চন্দ্রচূড় এর কাছে। দুই নেতাজী গবেষক অনুজ ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষের লেখা বইয়ে ‘Coundrum: Subhas Bose’s life after death’ তে নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্যের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে গুমনামি তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সিনেমায় সেই উল্ল্যেখ যেমন রয়েছে। ঠিক তেমনিই রাশিয়া থিওরি ও মুখার্জী কমিশনের তত্ত্বকেও তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। বোঝা গেছে কতটা গবেষণা এবং কতদিনের পরিশ্রম কাজ করেছে এর পেছনে।নেতাজির রহস্যজনক অন্তর্ধান কে নিয়ে একটা অ্যাসাইনমেন্ট এর দায়িত্ব দাওয়া হয় তাকে। যত সে নিজের কাজে এগিয়ে যায় ততই তার সাথে দর্শকরা ডুবে যায় নানান তথ্য এবং তথ্যকে কেন্দ্র করে ঘিরে ওঠা রহস্যে। ছবি কখনো সাদা কালো, কখনও রঙিন। কখনও তা দর্শককে নিয়ে যাবে ১৯৪৭ এ কখনো ১৯৮৫ তে কখনও বা ২০১৯ এ।দর্শক খুব সাধারণভাবে ই প্রতিটি পট পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে নিজেকে। তবে শেষপর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি গুমনামি। রহস্য আজও রয়ে গেছে রহস্য হয়ে তবে বাঙালিদের মনে সেই রহস্যকে আরও উসকে দেয় পরিচালক সৃজিত মুখর্জী।
ছবিতে মুখ্য চরিত্রে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর অভিনয় মন কারবে দর্শকদের। নেতাজী ভারতীয়দের মূলত বাঙালিদের একটি আবেগ, আর সেই আবেগের মান রাখার বড় দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করতে যে ভালোই পেরেছেন এই কথা বলাই যায়। পরিচালক সৃজিত মুখার্জি এর আগেও বাংলা সিনেমাকে উপহার দিয়েছে ২২ শে শ্রাবণ এর মতন ছবি। এবার পুজোতে উপহার দিলেন গুমনামি। চন্দ্রচূড় এর ভূমিকায় অনির্বাণ সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে। ছবির আমেজ কে আরো উত্তেজনাময় এবং টানটান করে রাখে দৃশ্যের সাথে মানানসই সঙ্গীত এবং ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক যা দর্শকদের মধ্যে তৈরি করে এক রহস্যের আমেজ, আর এই সঙ্গীত পরিচালনার দ্বায়িত্বে ছিলেন ইন্দ্রজিৎ দাশগুপ্ত। ছবির গান গেয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়, সোনু নিগম, এবং ঈশান মিত্র। তবে ছবির মাস্টার স্ট্রোক ছিল সব শেষে জনগণমন যা হলে উপস্থিত দর্শকদের প্রতিটি রোমকূপ কে সজাগ করে তুলতে সক্ষম।
সব মিলিয়ে এবার পুজোয় সৃজিত মুখর্জীর এই উপহারটি উপভোগ করে আসতেই পারেন।রহস্য এবং আবেগের মিশ্রণে হলে বসে সময়টা বেশ ভালো কাটবে বলাই যায়।
৮.৫/১০