বাংলা হান্ট ডেস্ক: শুধুমাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। তাই, পুঁথিগত শিক্ষা তাঁর খুব একটা বেশি ছিল না। যদিও, তাতে অসুবিধে হয়নি তাঁর। কারণ, ছোটবেলা থেকেই পুঁথিগত পড়াশোনার পরিবর্তে হাতে-কলমে কাজ করে শিক্ষালাভেই বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। আর সাথে ছিল অসম্ভব জেদ। এই দু’য়ের ওপর ভর করেই একের পর এক বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন লাক্ষাদ্বীপের বাসিন্দা আলি মানিকফন (Ali Manikfan) ওরফে মুরাইদুগানদুয়ার আলি মানিকফন।
প্রথম থেকেই প্রকৃতির প্রতি একটা অমোঘ আকর্ষণ ছিল তাঁর। দাদুর হাত ধরেই প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, সামুদ্রিক প্রাণী, মাছ, জাহাজ কিংবা তারা দেখে দিক নির্ধারণও করতে পারেন মানিকফন। এক্কেবারে প্রথম দিকে মানিকফনের বাবা পড়াশোনার জন্য তাঁকে কুন্নুরে পাঠালেও তিনি মাঝপথে তা ছেড়ে চলে এসেছিলেন। তারপরে পেশায় মৎস্যজীবী দাদুর সঙ্গেই মাছ ধরতে যেতেন তিনি।
তবে, স্কুল জীবনের পুঁথিগত শিক্ষা না থাকলেও জীবনে চলার পথে তাঁকে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়নি। বরং, তিনি একের পর এক চাকরির সাথে যুক্ত হতে পেরেছিলেন। কখনও শিক্ষকতার কাজ আবার কখনও কেরানির পদেও কাজ করেছেন মানিকফন। আবহাওয়া দফতরের অনুরোধে আলি লাইটহাউসে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। এমনকি, হাইড্রোজেন বেলুন উড়িয়ে আবহাওয়ার গতিবিধিও নির্ধারণ করতে পারেন তিনি।
সর্বোপরি, মানিকফন হিন্দি, মালয়ালম, আরবি, ইংরেজি, রাশিয়ান, জার্মানের মত মোট ১৪ টি ভাষায় কথা বলতে পারেন। এমতাবস্থায়, সমুদ্র মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের রসায়ানাগারে সমুদ্র জীববিজ্ঞানী সান্থাপ্পন জোনসের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মানিকফন। স্বাভাবিকভাবেই, মানিকফনের বহুমুখী প্রতিভায় অবাক হয়ে যান তিনি।
১৯৮১ সাল নাগাদ সান্থাপ্পন জোনস মানিকফনের সঙ্গে টিম সেভেরিন নামের এক আইরিশ পর্যটকের পরিচয় করিয়ে দেন। তারপরেই, তাঁরা দু’জনে মিলে একটি জাহাজ বানানোর পরিকল্পনা করে ফেলেন। যা মানিকফনের জীবনে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে রয়েছে। এমতাবস্থায়, শুধুমাত্র কাঠ দিয়েই ৮০ ফুট লম্বা, ২২ ফুট চওড়া একটি জাহাজ তৈরি করে ফেলেন তাঁরা। মোট ৩০ জনের সহায়তায় টিম ও মানিকফন ওমানে এই জাহাজ তৈরির কাজ শেষ করেন। এটি তৈরি করতে কোনো ধাতুর ব্যবহার করা হয়নি।
পাশাপাশি, সেটির নাম রাখা হয় “সোহার”। এই জাহাজে চেপেই ওমান থেকে দীর্ঘ ৯,৬০০ কিমি যাত্রা সম্পন্ন করে চিনে পৌঁছে যান টিম। ওমানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ম্যারিটাইম হিস্ট্রিতে বর্তমানে জাহাজটি রাখা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, মানিকফনের মোট চার সন্তান রয়েছে। তাঁর ছেলে-মেয়েরাও মানিকফনের মত পুঁথিগত শিক্ষায় বিশ্বাসী নয়।
তাঁর তিন মেয়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত রয়েছেন এবং তাঁর এক মাত্র ছেলে নৌবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন। আপাতত কেরলের কোজিকোড় জেলার ওলাভান্না শহরে খুব সাধারণ ভাবে জীবন কাটান মানিকফন। পাশাপাশি, ১৫ একরের অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করেছেন তিনি। নিজের বাড়িতে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করে সেই সংযোগ স্থাপন ছাড়াও ব্যাটারিচালিত সাইকেলও তৈরি করেছেন মানিকফন। এদিকে, তাঁর এই বহুমুখী কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ২০২১ সালে পদ্মশ্রী সম্মান দ্বারা ভূষিত করা হয়।