‘ভারতেই করব গবেষণা’, বিদেশে লোভনীয় অফার প্রত্যাখ্যান বাংলার যুবকের! চোখে জল পরিচারিকা মায়ের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: পরিবারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। রাজমিস্ত্রি বাবার রোজকারে সংসারে ঘর চলেনা। আর তাই স্বাচ্ছল্য আনতে মা অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তবে পেটে ভাত জুটুক বা না জুটুক সন্তানের পড়াশোনায় কোন খামতি রাখেননি তারা। আর এই এবার সেই ছেলেই উজ্জ্বল করল মা বাবার নাম। অশোকনগরের একচিলতে ছোট ঘরটা ভেদ করে যেন চাঁদের আলো পড়েছে।

অশোকনগর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোমিনপুরের বাসিন্দা বছর ২৩-এর যুবক সঞ্জয় দে (Sanjay Dey)। দরিদ্রতার সাথে পরিচয় সেই কোন ছোটবেলায়। তবে কোনোকিছুতেই হার মানেননি তিনি। মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করার পর বিজ্ঞান বিষয়েই এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকেও সায়েন্সে ভালো ফলাফল করেন সঞ্জয়। এরপর পদার্থবিদ্যাকে বেছে নেন পথের পাথেয় হিসেবে।

আসলে বিজ্ঞানের প্রতি তার ভালোবাসা আজকের নয়। ছোট থেকেই অমোঘ টান ছিল এই বিষয়টার উপর। সেই টান থেকেই দেশ বিদেশের বড় বড় রিসার্চ সেন্টারে সুযোগের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন সঞ্জয়। অবশেষে সাফল্য এসে ধরা দেয় তার কাছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও এসেছে ডাক।

জেনে অবাক হবেন যে, তাইওয়ানের চেং কুং ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক পাওয়া সত্ত্বেও ফিরিয়ে দিয়েছেন এই মেধাবী। সঞ্জয়ের পাখির চোখ কেবল দেশের উপর। তিনি আপাতত বিদেশে পাড়ি না দিয়ে দেশের জন্যেই কিছু করতে চান। আর তাই তো বেঙ্গালুরুর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল সায়েন্সে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ছেলের এই সিদ্ধান্তে আনন্দে আটখানা তার বাবা মা-ও।

এই বিষয়ে সঞ্জয়ের মা আভা দে বলেন, “আমার খুব আশা ছিল ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছি। ছেলে আমার বাধ্য। আগে বাড়ির সামনে হাঁটু জল ছিল। ওকে তার মধ্য দিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতাম। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। রান্নার কাজ করতাম। রাতে আয়ার কাজ করতাম এবং দোকানও সামলাতাম। বিদেশেও ও পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিল। ওর ইচ্ছে দেশের হয়ে কাজ করা। ওর এই সিদ্ধান্তে আমি অত্যন্ত খুশি।।”

সঞ্জয় দে-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “পিএইচডি করার জন্য বিদেশ থেকে ডাক পেয়েছিলাম। তাইওয়ান থেকে সুযোগ আসে। কিন্তু, বিদেশে চলে গেলে সেখানেই বেশিরভাগ সময় থেকে যেতে হয়। আমি তা চাই না। ‘ফিজিক্স অফ লাইভ’ ছিল আমার বিষয়। এতদিন বায়োলজি নিয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তারাই এই নিয়ে গবেষণা করতেন।” উল্লেখ্য, সঞ্জয়ের পড়াশোনা কোন নামিদামী বেসরকারি স্কুল থেকে নয়। সরকারি বাংলা মাধ্যমেই পড়াশোনা করেছেন সঞ্জয়।

ad

Moumita Mondal
Moumita Mondal

মৌমিতা মণ্ডল, গ্র্যাজুয়েশনের পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। বিগত ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত। প্রায় ২ বছর ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর