বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানে (Pakistan) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে সিন্ধু প্রদেশে হিন্দু মেয়েদের অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা এবং জোর করে মুসলিম পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাগুলি বারবার সামনে এসেছে। তেমনই এক ঘটনায় ফের ন্যায়বিচার পেলেন এক হিন্দু তরুণী— সুনীতা কুমারী মহারাজ। তিন মাস ধরে ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করার পর, আদালতের নির্দেশে অবশেষে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারলেন তিনি।
পাকিস্তানে (Pakistan) ফের হিন্দু নাবালিকাকে অপহরণ করে বলপূর্বক বিয়ে
এই ঘটনা ঘটে পাকিস্তানের (Pakistan) মিরপুরখাস জেলার কুনরি এলাকায়। অভিযোগ, সেখানে সুনীতাকে অপহরণ করা হয় এবং জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয়। এরপর তাঁর চেয়ে অনেক বেশি বয়সী এক মুসলিম পুরুষের সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। সুনীতার পরিবার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করার পর বিষয়টি আদালতে ওঠে। উমেরকোটের নিম্ন আদালত ঘটনাটি তদন্তে নির্দেশ দেয় এবং পুলিশ সুনীতাকে উদ্ধার করে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে রাখে। বেশ কয়েকবার শুনানি হওয়ার পর, সুনীতা আদালতে জানান যে তাঁকে জোর করে অপহরণ ও বিয়ে করা হয়েছে। এরপর আদালত তাঁকে পরিবারের জিম্মায় ফেরত পাঠায়।
আরও পড়ুন:হারিয়েছেন ভাইকে! ৪ মাস ধরে ঘরবন্দি বিমান দুর্ঘটনায় জীবিত রমেশ, স্ত্রী-ছেলের সঙ্গেও বলছেন না কথা
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা চন্দর কোহলি বলেন, “এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। পাকিস্তানের (Pakistan) সিন্ধুতে হিন্দু মেয়েদের লক্ষ্য করে ধারাবাহিকভাবে অপহরণ, ধর্মান্তর এবং জোরপূর্বক বিয়ে করানো হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদেরই বেশি টার্গেট করা হয়, কারণ তাঁরা আইনি লড়াই করার মতো আর্থিক ক্ষমতা বা সচেতনতা রাখেন না।” তাঁর কথায়, অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা বিয়ের নথি জাল করে এবং ভুক্তভোগীর ইচ্ছা আছে এমন দাবি করে আইনের ফাঁক গলে পালানোর চেষ্টা করে।
পাকিস্তানের (Pakistan) স্থানীয় সমাজকর্মীদের মতে, সুনীতা ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন, কারণ বহু হিন্দু মেয়েই আজও এমন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনি সাহায্য পান না। গত মাসেই সিন্ধু অঞ্চলের আরেকটি ঘটনায় ১৫ বছর বয়সী এক হিন্দু কিশোরী আদালতে আবেদন জানায়— তাকে অপহরণ, ধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তর ও বিয়ে করা হয়েছে, এবং সে নিজের পরিবারে ফিরতে চায়।

পাকিস্তানে (Pakistan) হিন্দুদের সংখ্যা মাত্র ১.৬ শতাংশের কাছাকাছি। মানবাধিকার কর্মীরা জানিয়েছেন, শুধু সিন্ধুতেই প্রতি বছর অন্তত শতাধিক হিন্দু ও খ্রিস্টান তরুণী এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। যদিও পাকিস্তান সরকার বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সুনীতার পরিবারের দাবি, এই রায় কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভয় এখনো কাটেনি। সমাজকর্মীদের কথায়, “আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এই সঙ্কট থামবে না।”
সুনীতার ফিরে আসা আশা জাগায়, তবে পাকিস্তানে (Pakistan) সংখ্যালঘু মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আরও তীব্র করে তুলেছে এই ঘটনা। পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে এখন সুনীতার লক্ষ্য নিজেকে আবার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। তাঁর লড়াই অনেকের চোখে হয়ে উঠছে প্রতীক— নীরব ত্রাসের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের দাবি।













