বাংলাহান্ট ডেস্ক: দুর্গাপুজোর মণ্ডপে গান্ধীজি (Mahatma Gandhi)। না, কোনও দুর্দান্ত থিম বা মন্ডপ সজ্জায় স্থান পাননি তিনি। বরং তাঁকে নিয়ে করা হয়েছে একটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও কুৎসিত কাজ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই রীতিমতো তোলপাড় চলছে রাজনৈতিক মহলে। খাস কলকাতার বুকেই ঘটেছে এমন নজিরবিহীন ঘটনা।
কলকাতায় এই বছরই প্রথম দুর্গাপুজো করা হচ্ছে হিন্দু মহাসভার তরফে। কসবার রুবি কানেক্টারের কাছে সেই পুজোয় দেখা গিয়েছে মহাত্মা গান্ধীকে। মাথা জোড়া টাক, পরণে সেই খাটো ধুতি, চোখে রয়েছে চশমা। কিন্তু তাঁর জায়গা হয়েছে মা দুর্গার ত্রিশূলের নীচে! অর্থাৎ মহিষাসুরের পরিবর্তে দেবী দমন করছেন মহাত্মা গান্ধীকে! গতকাল অর্থাৎ সপ্তমীতে ছিল মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী। সেই রাতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই ছবিটি। এরপরেই তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
যদিও এরপরেও নিজেদের অবস্থান নিয়ে অনড় হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি সুন্দরগিরি মহারাজ। তিনি বলেন, “রাজা যে উলঙ্গ সেটা নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এতদিন কেউ এটা বলার সাহস পাচ্ছিল না। এতদিন যে গান্ধীর ভজনা হচ্ছিল, সে কোন গান্ধী? সে কি আদৌ মহাত্মা হতে পারে?” তিনি আরও বলেন, “আমরা হিন্দুরা ধার্মিক হওয়ার চেয়েও বেশি দার্শনিক। অতএব আমার মতে, মূর্তির আদল যদি এমনটা হয়েও থাকে, তাহলে সঠিক হয়েছে।”
তবে শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে এই ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন সকলেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দোষীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনায় অবাক তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এমনকি এই ঘটনার নিন্দা করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনি বলেন, “গান্ধীজি ভারত মায়ের শ্রেষ্ঠতম সন্তানদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে এভাবে দেখানো একেবারেই ঠিক নয়।”
এই ঘটনার রাতেই টিটাগড় থানায় মামলা দায়ের করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য কৌস্তভ বাগচী। এরপরেই চাপের মুখে পড়ে রাতারাতি ওই মূর্তির চেহারা বদলে দেওয়া হয়। চশমা খুলে গোঁফ লাগিয়ে দেওয়া হয়। মাথায় পরানো হয় একটি পরচুলা। এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা হিন্দু মহাসভার কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে রাতে এই বিষয়ে ফোন এসেছিল। ‘উপর মহল’-এর চাপেই যে অসুরের এই চেহারা বদল হয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
কসবা থানার তরফেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে পুজোর উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে, ওই পুজোর কোনও অনুমতিই নেই। গত ২৮ সেপ্টেম্বর কসবা থানায় পুজো করার অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত জমা করেন উদ্যোক্তারা। তবে মেলেনি অনুমতি। এটি ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সদস্য নয়। পুজোর তিন-চারদিন আগে থেকে মন্ডপ বাঁধার কাজ শুরু করা হয়।
প্রসঙ্গত, বরাবরই মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের বিরোধী হিন্দু মহাসভা। এর আগেও তাঁকে মানুষের কাছে খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে তারা। একইসঙ্গে গান্ধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে “প্রকৃত দেশপ্রেমী” আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। সেই কারণে নাথুরামের মৃত্যুদিবসকে বলিদান দিবস হিসেবে পালন করে এই সংগঠন।