বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভারতের সবথেকে সুন্দর রাজ্যের মধ্যে একটি হল সিকিম (Sikkim)। যদিও এই সুন্দর রাজ্যকে ভারতের (India) অন্তর্ভুক্ত করতে অনেক সংঘর্ষ করতে হয়েছিল। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে সেই সংঘর্ষের কারণেই সিকিম ভারতের ২২ তম রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। তবে প্রতিবেশী দেশ চিন এই ঘটনার বিরোধিতা করেছিল অনেক। তখন থেকে চিন (China) আর ভারতের মধ্যে পুর্বত্তর এর রাজ্য গুলো নিয়ে বিবাদ জারি আছে।
উল্লেখ্য, ১৬৪২ সালে সিকিম তখন অস্তিত্বে আসেম যখন ফুংসং নামগিয়াল-কে সিকিমের প্রথম চোগেয়াল (রাজা) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নামগিয়ালকে তিন বৌদ্ধ ভিক্ষু রাজা ঘোষণা করেছিলেন। সেখান থেকে সিকিমের রাজ পরিবারের শুরু হয়। এরপর নামগিয়াল রাজবংশ ৩৩৩ সাল পর্যন্ত সিকিমে রাজত্ব করে।
স্বাধীনতার পর ভারতের সব রাজত্বকেই দেশে বিলয় করা হয়। যদিও, সিকিমকে ভারতে বিলয় করাতে আরও ২৮ বছর লেগে গেছিল। উল্লেখ্য, চোগিয়াল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য তৈরি ছিল না। তাঁরা সিকিমের জন্য ভূটানের মতই স্বাধীনতা চেয়েছিল। তাঁরা বলত, স্বাধীনতার জন্য আমরা ভারতের সাথে চুক্তি করেছি। নামগিয়াল রাজবংশ আগাগোড়াই সিকিমের জন্য আলাদা দেশ দাবি করত।
চোগিয়ালের এই প্রচেষ্টার মধ্যে ৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সালের সকালে সিকিমের রাজমহলের বাইরে ভারতীয় সেনার বুটের আওয়াজ পাওয়া যায়। চোগিয়ালের রাজমহলকে চারিদিক থেকে ৫ হাজার সৈনিক ঘিরে ফেলে। এরপর চলে গোলাগুলি। রাজমহলের গার্ড গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাজমহলের গেটে মোতায়েন ২৪৩ গার্ডকে কাবু করতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় নেয় ভারতীয় সেনা। দুপুর ১২ঃ৪৫ পর্যন্ত সিকিম আজাদ দেশের তকমা হারিয়ে ফেলেছিল। চোগিয়ালকে মহলের মধ্যে নজরবন্দী করে রাখা হয়েছিল। সেই দিন দিল্লীর তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল কমিশনার বিএস দাসের কাছে বিদেশ সচিব কেবল সিং এর ফোন আসে, আর ওনাকে তৎক্ষণাৎ দেখা করতে বলা হয়।
বিএস দাস বিদেশ মন্ত্রালয়ের আদেশে ৮ এপ্রিল সিকিম পৌঁছান। দাস ৯ এপ্রিল চোগিয়ালের সাথে সাক্ষাতের জন্য সময় চান, কিন্তু চোগিয়াল মানা করে দেন। আগামী দিন চোগিয়াল বিএস দাসকে জানিয়ে দেন যে, ‘এটা ভেবনা যে, সিকিম গোয়ার মতো। আমরা স্বতন্ত্র আর স্বাধীন দেশ। আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। আপানদের আমাদের অনুসারে কাজ করতে হবে।”
বিএস দাস ১১ এপ্রিল ইন্ডিয়া হাউসে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমার জন্য কেবল সিং এর তরফ থেকে কি আদেশ আছে? বিবিসির একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, দাসের কাছে তখন সিকিম নিয়ে কোন নির্দেশ ছিল না। শুধু এটা বলা হয়েছিল যে, আমরা সিকিমের মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করার জন্য সাহায্য করব। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোন অফিসিয়ালি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন না। এমনকি ভারতের সাথে সিকিমের বিলয় শব্দের ব্যাবহারই করেছিলেন না তিনি।
এরপর সিকিমে জনমত সংগ্রহ করা হয়, সেখানে ৯৭.৫ শতাংশ মানুষ ভারতের সাথে থাকার জন্য সহমত হন। এরপর ২৩ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে সিকিমকে ভারতের ২২ তম রাজ্য বানানোর জন্য সংবিধান সংশোধন বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হয়। ওই দিনই ওই বিল ২৯৯-১১ ভোটে পাস হয়। রাজ্যসভায় এই বিল ২৬ এপ্রিল পাস হয়। এরপর ১৫ই মে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফকরউদ্দিন আলী আহমেদ ওই বিলে স্বাক্ষর করেন। এরপরেই সিকিমে নামগিয়াল রাজবংশের শাসন সমাপ্ত হয়।
‘ভারত আজ পর্যন্ত অলিম্পিকে সোনা পায়নি …’ ভরা মঞ্চে বেফাঁস মমতা