বাংলা হান্ট ডেস্ক: কোনো দূরের গন্তব্যে যাত্রার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ ট্রেন সফরকেই বেছে নেন। পাশাপাশি, অন্যান্য পরিবহণ মাধ্যমের তুলনায় ট্রেনযাত্রার ক্ষেত্রে খরচও অনেকটাই কম। এদিকে, অনেকসময়ই ট্রেনে চড়াকালীন যাত্রীরা ভুলবশত তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ, চার্জার বা লাগেজ ব্যাগ ইত্যাদি নামাতে ভুলে যান। এমতাবস্থায়, আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলিকে পেয়ে রেল কি ব্যবস্থা নেয় সেই প্রসঙ্গটিই তুলে ধরা হল বর্তমান প্রতিবেদনে।
আপনি ভুলবশত ফেলে আসা মূল্যবান জিনিসপত্রগুলি ফের ফেরত পেতে পারেন:
হ্যাঁ, আপনি ট্রেনে ফেলে আসা আপনার মূল্যবান জিনিসপত্রগুলি আবার ফেরত পেতে পারেন। রেলের নিয়মানুযায়ী ট্রেনে থাকা জিনিসপত্র সেগুলির আসল মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া রয়েছে। আসুন জেনে নিই সেই সম্পর্কে।
গন্তব্য স্টেশনে ট্রেন চেকিং করা হয়:
আপনাদের জানিয়ে রাখি যে, প্রতিটি ট্রেন তার গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছনোর পরে, খালি ট্রেনটিকে রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনীর (Railway Protection Force) একজন অফিসারের সাথে স্টেশনের কর্মীদের দ্বারা চেক করা হয়। এই চেকিংয়ে ট্রেনটির নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখার পাশাপাশি এটাও দেখা হয় যে, যাত্রীদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ লাগেজ বা জিনিসপত্র সিটের ওপর পড়ে রয়েছে কিনা।
কিছু পাওয়া গেলে তা স্টেশন মাস্টারের কাছে থেকে যায়:
চেকিংয়ের সময়ে কোনো জিনিস পাওয়া গেলে তা সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারের কাছে জমা দেওয়া হয়। এছাড়াও, ট্রেনে বা স্টেশনে পাওয়া যে কোনো দাবিহীন অথবা বুক না করা জিনিসপত্রের জন্য একটি রসিদ তৈরি করা হয় এবং তা স্টেশন মাস্টারের কাছে জমা দেওয়া হয়।
রেজিস্টারে উল্লিখিত থাকে সংশ্লিষ্ট জিনিসটি:
আরপিএফ বা রেলওয়ের অন্যান্য কর্মীদের দ্বারা জমা করা পণ্যগুলি হারানো সম্পত্তির রেজিস্টারে উল্লেখ করা হয়। সেখানে সেই জিনিসের বিবরণ যেমন বস্তুটির নাম, ওজন, আনুমানিক মূল্য ইত্যাদির একটি রেকর্ড রাখা হয়। এদিকে, যদি কোনো বাক্স বা সিন্দুক পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনী বা রেলওয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে সেই জিনিসপত্রের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকার তিনটি কপি থাকে। প্রথম কপিটি পণ্যের রেজিস্টারে, দ্বিতীয়টি ওই বাক্সে এবং তৃতীয়টি রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনীর কাছে রাখা হয়। এরপরে বাক্সটি সিল করা হয়।
হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফেরত দেওয়ার পদ্ধতি:
যদি কোনো ব্যক্তি হারানো সম্পত্তির জন্য যোগাযোগ করেন এবং স্টেশন মাস্টার যদি মনে করেন ওই ব্যক্তি সঠিক দাবি করছেন সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পণ্য সেই ব্যক্তির কাছে ফেরত দেওয়া হয়। যদিও, ওই ব্যক্তির সম্পূর্ণ ঠিকানা হারানো সম্পত্তির রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়। রেলওয়ে থেকে জিনিস পাওয়ার পরে, দাবিদারের স্বাক্ষরও রেজিস্টার করা হয়।
স্টেশন মাস্টার প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন:
যদি, কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে ওই দাবি করা ব্যক্তিকে স্টেশন মাস্টারের সন্দেহ হয়, সেক্ষেত্রে তিনি পণ্য হস্তান্তর করতে অস্বীকার করতে পারেন। এরপর বিষয়টি ডিভিশনাল কমার্শিয়াল সুপারিনটেনডেন্টের কাছে যায়। সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরই হারিয়ে যাওয়া দ্রব্য ফেরত দেওয়া হয়।
আসল মালিকের কাছে কিভাবে হারিয়ে যাওয়া জিনিস পাঠানো সম্ভব:
স্টেশন মাস্টারও হারানো জিনিসটি সঠিক মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমতাবস্থায়, যে কোনো বস্তুর ক্ষেত্রে নাম বা শনাক্তকরণের জন্য কোনো তথ্য পেলে সেক্ষেত্রে সেটি মালিকের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়।
লস্ট প্রোপার্টি অফিসে পাঠানো হয় হারিয়ে যাওয়া দ্রব্য:
স্টেশন বা ট্রেন ছাড়ার পর লস্ট প্রপার্টি অফিসে না পাঠিয়ে যখন হারিয়ে যাওয়া জিনিস সরাসরি যাত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, তখন সেক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না। এই ধরনের প্যাকেজ কোনো চার্জ ছাড়াই যাত্রীদের ফেরত দিতে হয়। এমতাবস্থায়, লাগেজ হারিয়ে গেলে স্টেশন মাস্টার ৭ দিন তাঁর তত্ত্বাবধানে রাখেন। এর পরে সেটি লস্ট প্রোপার্টি অফিসে পাঠানো হয়।