বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ভূতচতুর্দশী (bhoot chaturdashi), ক্যালেন্ডারে লাল দাগ না থাকলেও এইদিন ছুটি নিতে চায় অনেকেই। কারণ সেইদিন নাকি তেনারা (ভূত) ঘুরে বেড়ান। তাই বাইরে গেলেও মনের মধ্যে সর্বক্ষণ একটা আতঙ্ক কাজ করে। দেবী মহামায়া শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এবং মা লক্ষ্মীর আগমনের পরেই শুরু হয় দীপাবলির প্রস্তুতি পর্ব। দীপাবলির আগের রাতেই ভূতচতুর্দশী পালিত হয়।
ভূতচতুর্দশী (bhoot chaturdashi) এই শব্দটার সঙ্গে যেন ভয় যেন অতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কথায় বলে, এইদিন সব ভূতই যেন বাঁধন ছাড়া হয়ে যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়ায়। সেজন্য তাই ছোটবেলা থেকে বিশেষত এই দিনটির ভয়ই দেখানো হয় ছোট বাচ্চাদের। তবে এই সমস্ত ভূত প্রেত যাতে মানুষের ঘাড়ে চড়ে না বসে, অর্থাৎ যাতে কোন ক্ষতি না করে, এজন্য খেতে হয় চোদ্দশাক। তবে শুধুমাত্র ভূতের হাত থেকে রেহাই পেতেই নয়, বরং জীবনে আগত বিভিন্ন সমস্যার থেকে মুক্তি পেতেও এই চোদ্দশাক খাওয়া হয়।
এবারে জেনে নেওয়া যাক, কি কি উপকরণে এই চোদ্দশাক তৈরি। প্রকৃতপক্ষে ১৪ টি শাকের সংমিশ্রণই হল এই চোদ্দশাক। এই ১৪ টি শাক হল- কেঁউ, কালকাসুন্দি, শুশুনি, শুলফা, ওল, নিম, সর্ষে, বেথুয়া, শালিঞ্চা, গুলঞ্চ, জয়ন্তী, পটল বা পটল গাছের পাতা, হিঞ্চে, ভাঁট বা ঘেঁটু।
ভূত চতুর্দশী হল অশুভ শক্তি দমনের বিশেষ দিন। এই সমস্ত শাকে বিভিন্ন ঔষধি গুণ বর্তমান আছে। তাই এই শাকগুলো খেয়ে শরীরের রোগ ব্যাধি শেষ করাই হল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। ধারণ করা হয়, মানবদেহে রোগের উপস্থিতই অশুভ চিন্তার কারণ। তাই এই শাক খাওয়া হয়।
এবারে জেনে নেওয়া যাক, এই শাকগুলোর গুণাগুণ। হিঞ্চে এবং ঘেঁটু শাক খেলে সারতে পারে হাপানি বা ডায়ারিয়ার মত রোগ। মনসিক চাপ এবং উচ্চরক্তচাপের ফলে অনিদ্রা সমস্যার সমাধান হল শুষনি শাক। বাচ্চাদের পেটের রোগ, জ্বরের অষুধ হিসেবে শুলফা শাক ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গুলঞ্চ শাকের মাধ্যমে ডায়ারিয়া, গণেরিয়া, সিফিলিসের মত যৌনরোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আবার পটল পাতা যে কোনরকম লিভারের রোগ সারাতে একদম কার্যকারী।
যদিও বর্তমান সময়ে মানুষ চোদ্দশাকের সবরকম উপকরণ যোগাড় করতে না পাড়ায় এই তালিকায় স্থান পেয়েছে- পটল শাক, লাল শাক, গিমে শাক, নটে শাক, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, ধনে শাক, পুঁই শাক। তবে এই শাক রান্নার জন্য নির্দিষ্ট কোন ফোঁড়নের প্রয়োজন নেই। ফোঁড়নের জন্য কালোজিরে, কাচালঙ্কা, বা শুকনো লঙ্কা, পাঁচফোড়ন ব্যবহার করা হয়। আবার অনেকে শাকটি রান্নার জন্য আলু বেগুন ব্যবহারও করে থাকেন।