বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত ১৭ জুন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য (West Bengal)। শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরে নির্মল জোত গ্রামের পাশে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কলকাতাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjungha Express Accident)। এদিকে, ওই দুর্ঘটনার পরেই সংশ্লিষ্ট স্থানটি রীতিমতো পর্যটন স্থলে পরিণত হয়েছে স্থানীয় মানুষদের কাছে। শুধু তাই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ দুর্ঘটনাগ্রস্ত কোচের ছবি তোলার জন্য সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন বলেও জানা গিয়েছে।
গত সোম এবং মঙ্গলবার রেল লাইনের দু’পাশেই বিপুল মানুষের ভিড় পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায়, সামগ্রিক বিষয়টি ডিজাস্টার ট্যুরিজমের একটি শোচনীয় দৃশ্যকেই উপস্থাপিত করছে। এমনকি বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এই বিপুল ভিড়কে লক্ষ্য করে কিছুজন সেখানে জলের বোতল এবং স্ন্যাকস বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত কোচগুলিকে দেখতে এবং সেগুলির ছবি তুলতে বাইক, স্কুটারের ভিড় তো রয়েছেই। এর পাশাপাশি অনেকে গাড়ি ভাড়া করেও মাটিগাড়া, ফুলবাড়ি, বাগডোগরা থেকে সেখানে উপস্থিত হন।
এই প্রসঙ্গে মহম্মদ রেজ্জাক নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, “আমি গাইসালের মত দুর্ঘটনার কথা কেবল শুনেছিলাম। কিন্তু, সত্যিকারের ট্রেন দুর্ঘটনা কখনও দেখিনি। আমি সোমবারই এখানে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ায় মঙ্গলবার এখানে আসি। ফুলবাড়ি থেকে স্কুটার নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে এসেছি।” পাশাপাশি, তিনি তাঁর বন্ধু নজরুলের সাথে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া জেনারেল কোচের পাশে সেলফিও তুলেছেন। ঠিক একই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চৈতালি দাস। তিনি বলেন, “এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। এটা আমি টিভিতে দেখেছি। তবে, এটা আমি এখানে এসে দেখতে চেয়েছিলাম।” তিনি তাঁর দুই ছেলে এবং স্বামীকে নিয়ে এক ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে বাগডোগরা থেকে সেখানে পৌঁছেছিলেন।
আরও পড়ুন: জাহির খান হচ্ছেন টিম ইন্ডিয়ার পরবর্তী বোলিং কোচ? গম্ভীরের ইন্টারভিউয়ের মাঝেই বিরাট পরামর্শ পেল BCCI
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অনেকেই আবার ক্ষতিগ্রস্ত কোচ ঢুকে পড়ার চেষ্টাও করেন। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ আবার আহত যাত্রীদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্রও নিয়ে রাখছেন। যার ফলে সামগ্রিকভাবে ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। এদিকে, বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে রেলের একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা সেইসব বাসিন্দাদের কাছে কৃতজ্ঞ যাঁরা প্রথম উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিলেন। এখন আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি এবং স্বাভাবিক পরিষেবা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছি। তবে, স্থানীয়দের ট্র্যাক থেকে দূরে রাখাটাই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
এদিকে, কৌতূহলী মানুষদের দূরে সরিয়ে রাখতে পুলিশ এবং রেলের আধিকারিকরা সমগ্র জায়গাটিকে দড়ি দিয়ে ঘিরে রেখেছেন এবং ট্র্যাকগুলি পরিষ্কার রাখার জন্য কর্মীরা কাজ করেছেন। পাশাপাশি সেখানে একজন আধিকারিক স্থানীয় মানুষদের ক্রমাগত রেললাইন থেকে দূরে থাকতে এবং রেল কর্মীদের কাজে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য অনুরোধ করেছেন। এদিকে, এই বিপুল জনসমাগম প্রত্যক্ষ করে সেখানে চিপস, সিগারেট থেকে শুরু করে স্ন্যাকস বিক্রি শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দার শেখ রফিকুল। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “স্থানীয় মেলাগুলিতেও এত ভিড় হয় না। আমি সুযোগ বুঝে এখানে দোকান শুরু করেছি।”