খাস কলকাতায় অবৈধ বাংলাদেশি সিমকার্ডের রমরমা ব্যবসা, লালবাজারের র‍্যাডারে ১৫ টি দোকান

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার কলকাতায় বেআইনিভাবে বাংলাদেশি সিম কার্ড বিক্রির অভিযোগ উঠল। শহরের বুকে কার্যত রমরমিয়ে চলছে এই ব্যবসা। ইতিমধ্যেই মধ্য কলকাতার ১৫ টি দোকান শনাক্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন গোয়েন্দারা।

জানা গিয়েছে যে, ওই দোকানগুলি থেকেই সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে এই বেআইনি সিমকার্ডগুলি। কোনো কোনো মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি বাংলাদেশের সিমকার্ড। আর তার বদলে নেওয়া হচ্ছে মোটা টাকাও!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাসখানেক আগেই পূর্ব কলকাতার আনন্দপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জন বাংলাদেশিকে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিদেশে বাংলাদেশি যুবকদের পাচার চক্রের মাথাও। ওই চক্র কলকাতায় বসে এই বেআইনি বাংলাদেশি সিমকার্ডের মাধ্যমে সেদেশের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত বলে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা।

এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে যেমন এই সিমকার্ডগুলির চাহিদা রয়েছে, তেমনই এই রাজ্যের বাসিন্দাদের একাংশও কিনছেন এই সিম। পাশাপাশি, সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু বাসিন্দাও জেলা থেকে কলকাতার ওই দোকানগুলিতে এসে বাংলাদেশি সিমকার্ড নিয়ে যান বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

সম্প্রতি গোয়েন্দারা মধ্য কলকাতার অন্তত ১৫ টি দোকান চিহ্নিত করেছেন যারা এই বেআইনি সিমগুলি বিক্রি করে। যদিও, দোকানগুলি নিজেদের “পর্যটন সংস্থা” বলে পরিচয় দিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এদের মধ্যে কয়েকটি দোকান বাংলাদেশি টাকাও ভারতীয় টাকায় পরিবর্তন করে। আবার একই সঙ্গে ওই দোকানগুলি গোপনে বেআইনিভাবে বিক্রি করে বাংলাদেশি সিমকার্ডও।

পাশাপাশি, গোয়েন্দারা মধ্য কলকাতার কয়েকটি হোটেলও শনাক্ত করেছেন, যাদের কর্মীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশি সিমকার্ড বিক্রেতাদের। ওই কর্মীরা ক্রেতাদের সিমকার্ড বিক্রেতাদের কাছেও নিয়ে যান এবং তার বদলে পান মোটা কমিশন। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে গড়ে ৩০ টি করে এই বেআইনি সিমকার্ড বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও, করোনার কারণে বিক্রি আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

sim news

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই সিমকার্ড ব্যবহার করে ফোন করলে সেগুলি সহজে শনাক্ত করা যায়না। এদিকে, জামাত-উল-মুজাহিদিন (বাংলাদেশ) বা জেমবির মতো জঙ্গি সংগঠনও এই রাজ্যে সক্রিয়। ফলে জঙ্গিরাও এই সিমকার্ড ব্যবহার করতে পারে, এমন সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। তাই জাতীয় সুরক্ষার জন্য পুলিশ ও নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন মহলকে বাংলাদেশি সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পাশাপাশি, জানা গিয়েছে যে, কলকাতায় চোরাপথে এসে পৌঁছচ্ছে বাংলাদেশের সিমকার্ড। গত মাসেই গোয়েন্দাদের কাছে খবর আসে যে, কলকাতায় বাংলাদেশের সিমকার্ড বিক্রি বেড়ে গিয়েছে। এর আগেও লুকিয়ে চুরিয়ে বাংলাদেশি সিমকার্ড বিক্রি হলেও তার সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু গত কয়েক মাসে রেকর্ড হারে বেড়েছে এই সিমকার্ড বিক্রি।

রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিটি বাংলাদেশি সিমকার্ড আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। ওই সিমকার্ডগুলি বিক্রির সময় কোনও নথিপত্রও চাওয়া হয় না। মোবাইলে “পোর্ট” পরিবর্তন করে এই সিমকার্ডগুলি এখান থেকেই ব্যবহার করতে পারেন ক্রেতারা।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর