বাংলাহান্ট ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ভারতের (India) অর্থনীতিকে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ‘বৃদ্ধির ইঞ্জিন’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, এমন এক সময়ে যখন চিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমশ শ্লথ হচ্ছে, তখন ভারত বিপরীতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের আগে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। জর্জিয়েভা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির প্যাটার্নে এখন একটি বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, আর সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে ভারত।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের (India) প্রশংসা
আইএমএফ প্রধানের কথায়, বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিত্রে ভারত (India) একটি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। যেখানে চিনের প্রবৃদ্ধি হার ক্রমাগত নিম্নগামী, সেখানে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসছে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির পারফরম্যান্স আগের আশঙ্কার তুলনায় অনেক ভালো বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। এ বছর বৈশ্বিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩ শতাংশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ।
আরও পড়ুন:কাবুল দখলের পর এই প্রথম ভারতে এলেন তালিবান বিদেশমন্ত্রী! জয়শঙ্কর-ডোভালের সঙ্গে হবে বৈঠক
জর্জিয়েভা, চারটি প্রধান কারণে বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা টিকে আছে বলে মনে করেন। প্রথমত, ভারত (India) সহ বহু দেশই কার্যকর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে এবং আর্থিক নিয়ম-কানুনকে শক্তিশালী করেছে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক আর্থিক বাজার এখনও তুলনামূলক অনুকূল পরিবেশ বজায় রেখেছে। তৃতীয়ত, বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতি এখন পর্যন্ত ‘জবাবি পাল্টা প্রতিক্রিয়া’র জালে জড়ায়নি। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এখনো পুরোপুরি পরীক্ষিত নয় এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এখন নতুন স্বাভাবিক অবস্থা হয়ে উঠেছে। চতুর্থত, তাঁর মতে বিশ্ব অর্থনৈতিক বাজারে এখনও অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে যার জন্য এখনও অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি।
ভারতের (India) শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়েও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন তিনি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ৬.৫ শতাংশ করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮ শতাংশ, যা গত পাঁচ ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
ভারতের (India) অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দৃঢ় অভ্যন্তরীণ ভোগ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও সম্প্রতি বলেছেন, বৈশ্বিক ধাক্কা সত্ত্বেও ভারতীয় অর্থনীতি তার নিজস্ব গতি বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। দেশীয় বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন ভারতের বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি কোম্পানিগুলি দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং নতুন ব্যবসায়িক মডেল গড়ে তুলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কনীতির প্রভাব যতটা ভয়ানক আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা ততটা গুরুতর হয়নি। যদিও জর্জিয়েভা সতর্ক করে দেন যে এর পূর্ণ প্রভাব ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তনের এই সময়ে ভারতের (India) ধারাবাহিক সাফল্য এবং নীতিগত দৃঢ়তা দেশটিকে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে নিয়ে এসেছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।