বাংলা হান্ট ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বাংলাদেশের (Bangladesh) আর্থিক সংকটে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, দেশের নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আর কোনও ঋণের কিস্তি দেবে না। ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান মহম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের (Bangladesh) ৮০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ বন্ধ করল IMF:
২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের সময় বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার IMF-এর কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে IMF মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন করে। এখন পর্যন্ত দেশটি পাঁচ দফায় প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ষষ্ঠ কিস্তি হিসেবে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬,৭২০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু IMF জানিয়েছে, নতুন নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত এই কিস্তি দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন:বারাণসী-অযোধ্যার মতো ৪ টি আধ্যাত্মিক শহর ঘোরার সুযোগ, আকর্ষণীয় প্যাকেজ আনল IRCTC, খরচ কত পড়বে?
IMF স্পষ্ট করেছে, তারা জানতে চায় বাংলাদেশে (Bangladesh) নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে কি না। তাই এখনই অর্থ ছাড় দেওয়া তাড়াহুড়া হবে। সংস্থার মতে, সরকার পরিবর্তনের পর নতুন নেতৃত্বের নীতি ও প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই অবস্থায় IMF তাদের অবস্থানকে দৃঢ় করেছে, যাতে ভবিষ্যতের প্রশাসন আর্থিক সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।
এই তথ্য জানা গেছে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত IMF ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে, যেখানে বাংলাদেশ (Bangladesh) ব্যাঙ্কের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মন্সুর উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মতে, ডিসেম্বর মাসে এই কিস্তি মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও IMF এখন তা স্থগিত করেছে। তিনি বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার স্থিতিশীল রয়েছে, ডলারের দামও নিয়ন্ত্রণে আছে, তাই এই মুহূর্তে ঋণ না পেলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, IMF যদি অতিরিক্ত কঠিন শর্ত চাপায়, বাংলাদেশ তা মানবে না। তিনি বলেন, দেশ এখন আর আগের মতো চরম আর্থিক সংকটে নেই। তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, IMF আসলে নির্বাচনের আগে তাদের শর্ত মানানোর জন্য চাপ তৈরি করছে। কিস্তি স্থগিত রাখা একটি কৌশল, যাতে বিশ্বকে জানানো যায়—বাংলাদেশ এখনও IMF-এর নির্ধারিত সংস্কার কর্মসূচি পুরোপুরি পালন করছে না।
আরও পড়ুন:অপ্রতিরোধ্য ভারত বারংবার টক্কর দিচ্ছে চিনকে! এবার দেশেই তৈরি হতে চলেছে স্মার্টফোন হাব
২০০১ সালেও একইভাবে নির্বাচনের আগে IMF বাংলাদেশের (Bangladesh) ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। ২০২২ সালেও সংস্থার শর্ত মেনে বাংলাদেশ সরকারকে তেল ও গ্যাসের দাম বাড়াতে হয়েছিল। এবারও IMF একই পথে হাঁটছে বলে মনে করা হচ্ছে। IMF-এর একটি প্রতিনিধি দল আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছাবে। দুই সপ্তাহের সফরে তারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে ও শর্তপূরণের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে। এরপর তাদের প্রতিবেদন IMF সদর দফতরে পাঠানো হবে, যা নির্ধারণ করবে, ষষ্ঠ কিস্তি আদৌ মুক্তি পাবে কি না।
বর্তমানে বাংলাদেশ (Bangladesh) ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। প্রবাসী আয়ে ও রপ্তানিতে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে, পাশাপাশি আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের পর থেকে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকার কাজ করছে। কিন্তু IMF-এর নতুন সিদ্ধান্তে দেশটির সামনে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিসরে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গেল।