ট্রেন টানত ঘোড়া, যাতায়াত করতেন বহুজনেই! অবাক লাগছে? এই দেশেই চলত এমন বিশেষ ‘যান’

বাংলাহান্ট ডেস্ক : যতদিন গেছে ততই উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি। উন্নত প্রযুক্তির দৌলতে আমাদের জীবনে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রযুক্তির অন্যতম সেরা আবিষ্কার হল যানবাহন। যতদিন গেছে ততই উন্নত প্রযুক্তির যানবাহন আবিষ্কার হয়েছে। জাপানের বুলেট ট্রেন, চিনের সাংহাই মাগলেভ, কিংবা ভারতের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, অত্যাধুনিক এই ট্রেনগুলি নজর কেড়েছে সারা বিশ্বের।

তবে বিশ্বের এখনো কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে যানবাহনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ঘোড়া, গাধা, উটকে। তবে জানেন কি আমাদের বিশ্বে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ঘোড়ায় টানা ট্রেন চলত? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। কিছুদিন আগে পর্যন্ত পাকিস্তানের একটি রুটে যানবাহনের মাধ্যম ছিল এই ঘোড়ায় টানা ট্রেন।

যাত্রীরা এই ঘোড়ায় টানা ট্রেনে চেপেই পৌঁছাতেন নিজেদের গন্তব্যে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই ঘোড়ায় টানা ট্রেন চলত পাকিস্তানের ফয়জ়লাবাদ জেলার জরানওয়ালা এলাকায়। এই ট্রেন আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে অবিভক্ত ভারতে চালু হয়। তৎকালীন এক জনপ্রিয় সমাজকর্মী চালু করেন এই ট্রেন। গঙ্গারাম আগরওয়াল নামে ওই সমাজকর্মী ১৯০৩ সালে তাঁর গ্রাম জরানওয়ালায় এই পরিবহন ব্যবস্থা চালু করেন।

আরোও পড়ুন :

এই ট্রেন চলার জন্য ছিল একটি সরু রেলপথ। একটি মাত্র লাইন ছিল যাতায়াতের জন্য। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই ঘোড়ায় টানা ট্রেনের চল ছিল। এরপর ধীরে ধীরে সেই ঘোড়ায় টানা ট্রেনের জায়গা দখল করে স্টিম ইঞ্জিন ট্রেন। কিন্তু গঙ্গারামের চালু করা এই ঘোড়ায় টানা ট্রেন কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পাকিস্তানে চলাচল করতে।

ব্রিটিশ শাসনাধীন পঞ্জাব প্রদেশের মাংতানওয়ালা গ্রামে (অধুনা পাকিস্তানে) ১৮৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন গঙ্গারাম। লন্ডনে ১৯২৭ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। সমাজকর্মী হওয়ার পাশাপাশি গঙ্গারাম ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং স্থপতি। গঙ্গারাম বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে জরানওয়ালা এলাকার অনুর্বর জমিকে চাষ যোগ্য করে তোলেন। গঙ্গারাম তাঁর কর্মজীবনে বেশ কিছু বিখ্যাত ভবনের নকশা তৈরি করেন।

আরোও পড়ুন :

তৎকালীন ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন গঙ্গারামের কাজে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করেন। ১৯০৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময় তিনি লাভ করেছিলেন ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর গঙ্গারাম ফিরে আসেন পাঞ্জাবে। সেখানে অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য জমিতে রূপান্তরিত করে শুরু করেন কৃষিকাজ।

1696714268 4

ভারী কৃষিজ যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য তিনি ঘোড়ায় টানা রেল পথ তৈরি করেন। এরপর গ্রামের মানুষও এই ট্রেন ব্যবহার করতে শুরু করেন। গঙ্গাপুর গ্রাম থেকে এই ট্রেনটি চলাচল করত তিন কিলোমিটার দূরে থাকা বুচিয়ানা গ্রাম পর্যন্ত। সংরক্ষণের অভাবে এই ট্রেনটি ১৯৮০ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফের চালু করা হয় এই ট্রেন। কিন্তু তহবিলের অভাব ও প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্য ফের এই ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়।

Soumita

আমি সৌমিতা। বিগত ৩ বছর ধরে কর্মরত ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে। রাজনীতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, ভাইরাল তথ্য থেকে শুরু করে বিনোদন, পাঠকের কাছে নির্ভুল খবর পৌঁছে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

সম্পর্কিত খবর