বাংলাহান্ট ডেস্ক:- নজিরবিহীনভাবে ভারতীয় পণ্যের উপরে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসাল আমেরিকা। রাশিয়া থেকে ভারত (India) কেন তেল আমদানি করছে, তা নিয়েই ক্ষুব্ধ মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। তাঁর মতে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই বাণিজ্য সম্পর্ক আমেরিকার(America) স্বার্থের পরিপন্থী। তবে আমেরিকার বিরোধীরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্রই, কারণ উচ্চ শুল্কে ভারতীয় পণ্যের দাম বাড়বে এবং সেই ধাক্কা ভোক্তাদেরই সামলাতে হবে। তবুও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ট্রাম্প। ভারতের ক্ষতির অঙ্কও ছোট নয়—এই শুল্কনীতির ফলে প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার লোকসান হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই ধাক্কা থেকে ভারত কীভাবে বেরিয়ে আসবে।
ভারতের ৫টি উপায় (India)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের হাতে অন্তত পাঁচটি উপায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, শুল্ক সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই ভারত। তাঁর মতে, আমেরিকার চাপ ভারত নিতে পারবে এবং এ ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক মহলও ভারতের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে আস্থাশীল। গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি ফ্লিচের বক্তব্য অনুযায়ী, এই শুল্কের প্রভাব ভারতের জিডিপির উপর বড় আকারে পড়বে না, কারণ আমেরিকায় ভারতের রফতানি মোট জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। ফলে অর্থনৈতিক মূলভিত শক্ত থাকলে এই ঝড় সামলানো সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন:-আমেরিকায় কড়া নিয়ম আনল ট্রাম্প প্রশাসন! চিন্তা বাড়ল লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়ার
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্থিতি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি ৩.৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এটি রিজার্ভ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। খুচরো মুদ্রাস্ফীতিও জুলাই মাসে নেমে এসেছে ১.৫৫ শতাংশে, যা গত আট বছরে সর্বনিম্ন।
পরিকাঠামোতে জোর, অর্থনীতির আরেকটি ভরকেন্দ্র অবকাঠামো। কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাজ্যগুলির জন্য ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার বরাদ্দ এবং সুদমুক্ত ঋণের ঘোষণা করেছেন, যাতে উন্নয়ন এবং উৎপাদনকে গতি দেওয়া যায়।
কর আদায় ও জিএসটির সাফল্য, অর্থনীতির দৃঢ়তার আরেকটি পরিচায়ক হল কর সংগ্রহ। মে মাসে জিএসটি রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ২.০১ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৬.৪ শতাংশ বেশি। এর আগের মাস এপ্রিলে সংগ্রহ হয়েছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ, ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির শক্তি প্রদর্শন করছে।
আরও পড়ুন:-ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্কের আবহেই চিনে জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মোদী! সামনে এল দিনক্ষণ
আন্তর্জাতিক আস্থা ও জিডিপির পূর্বাভাস, গ্লোবাল সংস্থাগুলি কিন্তু ভারতের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার উপর আস্থা রাখছে। ফ্লিচের মতে, আমেরিকার এই শুল্কনীতি ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেবে না। কারণ আমেরিকায় ভারতের রফতানি জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ। বরং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ৬.৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে ভারতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদ অটুট রয়েছে।
দেশীয় বাজারের শক্তি, ভারতের অন্যতম শক্তি তার দেশীয় বাজার। ম্যাককিনসে-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট ভোগব্যয়ের ক্ষেত্রে ভারতের অংশীদারিত্ব ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ শতাংশে। তরুণ প্রজন্ম এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ক্ষমতাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেটিং সংস্থার স্থিতিশীল পূর্বাভাস, দেশীয় বাজারের ভোগ ক্ষমতা, করের শক্তি, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি এবং অবকাঠামোয় বিনিয়োগ—এই পাঁচ স্তম্ভ ভারতের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখবে। ফলে আমেরিকার শুল্ক-বোমা স্বল্পমেয়াদে চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে ভারত তা সামলে নিতে পারবে।