“সেখান থেকেই তেল কেনা হবে, যেখানে ভালো ডিল মিলবে”, মার্কিন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বার্তা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের

Published on:

Published on:

India clarifies position on oil trade.

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জ্বালানি তেলের বাণিজ্যে অন্য কারও দখলদারি একেবারেই বরদাস্ত করবে না ভারত (India)। আমেরিকার (America) সঙ্গে মন কষাকষির আবহে একথা স্পষ্ট করে দিলেন রাশিয়ায় (Russia) নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার (Vinay Kumar)। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিশ্ব বাজারে যেখানে সবচেয়ে কম দামে তেল পাওয়া যাবে সেখান থেকেই তেল কিনবে ভারত।

ভারতের রাষ্ট্রদূতের স্পষ্ট বার্তা (India)

জ্বালানি তেলের বাণিজ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবস্থান আরও পরিষ্কার করল ভারত। রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার জানিয়েছেন, তেল আমদানির ক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশের চোখ রাঙানি ভারত মেনে নেবে না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “বিশ্ব বাজারে যেখানে সবচেয়ে কম দামে তেল পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই কিনবে ভারতীয় সংস্থাগুলি। এটা একান্তই আমাদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত।” এই বক্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা বারবার রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সেই প্রেক্ষিতেই এই বক্তব্য কার্যত আমেরিকাকে কড়া বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে।

India clarifies position on oil trade.
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার

অর্থনৈতিক যুক্তির উপরই নির্ভর করে বাণিজ্য

আমেরিকার উদ্দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় কুমার বলেন, “বিশ্বের যেকোনও বাণিজ্যই নির্ধারিত হয় সঠিক চুক্তি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে। ভারতও ঠিক সেটাই করছে। আমরা এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না, যা অযৌক্তিক বা অস্বচ্ছ।” তাঁর কথায়, “ভারতীয় তেল সংস্থাগুলি যেখানে কম দামে তেল পাচ্ছে, সেখান থেকেই আমদানি চালিয়ে যাবে। এটা একেবারেই বাস্তববাদী এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত।” রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অন্য দেশগুলিও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছে। চিন, ইউরোপ এমনকি আমেরিকাও রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক চাপানো ন্যায্য নয়। বরং এটিকে তিনি ‘পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আমেরিকাকে দ্বিচারিতার অভিযোগে তুলোধোনা

বিনয় কুমার আমেরিকার এই শুল্কনীতিকে দ্বিচারিতা বলেই অভিহিত করেন। তাঁর মতে, “যখন নিজেরা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা বা শুল্ক আরোপ করা একরকম কূটনৈতিক ভণ্ডামি।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমেরিকা কি চিন বা ইউরোপের ওপর একইভাবে শুল্ক চাপিয়েছে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে ভারতের ক্ষেত্রেই বা এমন পদক্ষেপ কেন?”

বিদেশমন্ত্রীর আগেই স্পষ্ট বার্তা

কিছুদিন আগেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভারতের বাণিজ্যনীতি, কৃষকদের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না। সরকারের কাছে জাতীয় স্বার্থই সবার আগে। আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও দেশ যা ঠিক মনে করবে, সেটাই করবে। এই অবস্থান থেকেও স্পষ্ট, ভারত এখন আর কোনও বড় শক্তির ছায়াতলে নিজেকে চালাতে রাজি নয়।

আরও পড়ুন:-SBI-র ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারদের জন্য বড় আপডেট! ১ সেপ্টেম্বর থেকে বদলাচ্ছে নিয়ম, মিলবে না এই সুবিধা

‘স্বতন্ত্র নীতি’-তে অনড় ভারত

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এখন ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে চলার নীতি গ্রহণ করেছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চললেও, জাতীয় স্বার্থে কোনও আপস করতে রাজি নয় দিল্লি। বিনয় কুমারের এই বক্তব্য তারই প্রতিফলন। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারী দেশ হিসেবে ভারতের নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য স্বল্পমূল্যের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। রাশিয়া সেই প্রেক্ষিতে ভারতের কাছে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে।

রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে আমেরিকার চাপকে একপ্রকার প্রত্যাখ্যান করেই দিল ভারত। রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে স্পষ্ট, ভারতের সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত বুদ্ধিমত্তার নিরিখেই নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের দৃঢ় অবস্থান আবারও সামনে এল। অর্থাৎ, এখন আর ‘কে কী বলছে’ তাতে ভারত মাথা ঘামাচ্ছে না— দেশ যে নীতিকে সঠিক মনে করছে, সেটাই অনুসরণ করছে, এবং করবে।