বাংলাহান্ট ডেস্ক: ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের হাত ধরে ভারত (India) এবার বিশ্ববাজারে নতুন ইতিহাস গড়ল। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসেই, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে, ভারত থেকে মোবাইল ফোন রফতানি ১ লক্ষ কোটি টাকার সীমা ছাড়িয়ে গেল। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই রফতানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ, যা এককথায় নজিরবিহীন সাফল্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ বা পিএলআই স্কিম, যা ভারতে উৎপাদন বাড়াতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
চিনকে টেক্কা দিল ভারত (India)
ভারতে (India) মোবাইল ফোন তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে অ্যাপলের কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার টাটা ইলেকট্রনিক্স, ফক্সকন ও টাটার অধীনস্থ পেগাট্রন। মূলত এই সংস্থাগুলিই দেশে তৈরি আইফোন বিশ্ববাজারে রফতানির মাধ্যমে এক অসাধারণ সাফল্যের ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। চলতি অর্থবর্ষে মোট মোবাইল রফতানির প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ফোন রফতানি করেছে এই দুই প্রধান সংস্থা। অ্যাপলের প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেট রফতানির ফলে শুধু যে ভারতের রফতানি আয় বেড়েছে তাই নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ভাঙার চেষ্টায় কেউ কখনও সফল হবে না! স্পষ্ট বার্তা রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর
একসময় ভারত (India) ছিল মূলত মোবাইল ফোন আমদানির উপর নির্ভরশীল। বিদেশ থেকে আসা যন্ত্রাংশ ও প্রস্তুত ফোনই ছিল দেশের চাহিদা পূরণের প্রধান উৎস। কিন্তু পিএলআই স্কিম সেই পুরোনো ছবিটাকে সম্পূর্ণ উলটে দিয়েছে। এই নীতির আওতায় উৎপাদন বাড়াতে কোম্পানিগুলি নানা ধরনের প্রণোদনা পেয়েছে। ফলে বিদেশি সংস্থা যেমন বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়েছে, তেমনি দেশীয় সংস্থাগুলিও উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। এর প্রভাব এতটাই গভীর যে ভারত এখন শুধু আত্মনির্ভরই নয়, বরং বিশ্ববাজারে অন্যতম বড় রফতানিকারক দেশ হিসেবেও উঠে এসেছে।
এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকের তথ্য বলছে, আমেরিকার বাজারে বিক্রি হওয়া মোট স্মার্টফোনের ৪৪ শতাংশই তৈরি হয়েছে ভারতে (India)। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে ভারত এখন স্মার্টফোন উৎপাদনে চিনকেও পিছনে ফেলে দিচ্ছে। বিশেষত মার্কিন বাজারে ভারতের এই দাপট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে। ভারতের তৈরি স্মার্টফোন এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশেই নয়, বরং উন্নত দেশগুলির বাজারেও সমানভাবে প্রতিযোগিতা করছে।
আরও পড়ুন:অবশেষে অপেক্ষার অবসান, সাহারা ফান্ড ফেরত নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল শীর্ষ আদালত
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাফল্য ভারতের (India) প্রযুক্তি শিল্পে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। মোবাইল রফতানির বৃদ্ধি যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়াচ্ছে, তেমনি দেশীয় কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তও উন্মুক্ত করছে। বড় মাপের উৎপাদন ও রফতানির ফলে আগামী দিনে বহু মানুষ কাজের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি আরও বিনিয়োগ আসবে, যা ভারতের শিল্পক্ষেত্রকে দীর্ঘমেয়াদে শক্ত ভিত দেবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প আর কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং বাস্তবে তার সাফল্য বিশ্বমঞ্চে ভারতের (India) অবস্থানকে আরও উঁচুতে তুলে ধরছে। মোবাইল রফতানির এই নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়ে দিল, সঠিক নীতি ও দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত এখন শুধু ভোক্তা নয়, বরং বৈশ্বিক উৎপাদন ও রফতানির এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।