বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারত তার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একের পর এক বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের বহরে সম্প্রতি নতুন যুদ্ধজাহাজ সহ বেশ কয়েকটি শক্তিশালী অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করেছে। একটি বড় আপডেট সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ভারতীয় নৌবাহিনী তার প্রথম বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজের (Electric Warship) প্রস্তুতির দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মূলত, রোলস-রয়েস কোম্পানি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কৌশল তৈরি করছে। অর্থাৎ, ভারতীয় নৌবাহিনীর সহযোগিতায় রোলস রয়েস দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনা করছে। নৌবাহিনীকে আধুনিক এবং পরিবেশ বান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে এটি ভারতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
তৈরি হবে ভারতের (India) প্রথম বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজ:
রোলস-রয়েস জোরদার করছে প্রস্তুতি: ইতিমধ্যেই রোলস-রয়েসের ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিষেক সিং এই পরিকল্পনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তাঁর কোম্পানি ভারতীয় নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে সহায়তা করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। হাইব্রিড-ইলেকট্রিক এবং ফুল-ইলেকট্রিক প্রোপালশন সিস্টেম, অর্থাৎ যুদ্ধজাহাজ (Electric Warship) চালানোর জন্য ব্যবহৃত পাওয়ার সিস্টেমে ওই সংস্থার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করবে: অভিষেক সিং বলেন যে, “ভারতের নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে সহায়তা করার জন্য রোলস-রয়েসের কাছে সঠিক পণ্য, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা সমন্বিত হাইব্রিড-ইলেকট্রিক এবংফুল-ইলেকট্রিক প্রোপালশন সিস্টেম (Electric Warship) সরবরাহে বিশেষজ্ঞ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রোলস-রয়েসের M30 ইঞ্জিন শক্তি, ঘনত্ব এবং নির্ভরযোগ্যতার ক্ষেত্রে নতুন মান স্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাপী এই ইঞ্জিনগুলির বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজের পরিকল্পনা কেন গুরুত্বপূর্ণ: রোলস-রয়েসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন প্রদানের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেটি ভারতের একটি আধুনিক এবং আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ করবে। এদিকে, HMS প্রিন্স অফ ওয়েলসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড কিংডমের কেরিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ (CSG) ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের মোতায়েনের অংশ হিসাবে মুম্বাই পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: কর্মসূচিতে নয়া চমক! কলকাতায় এসে ডার্বি দেখবেন মেসি, তুমুল উন্মাদনা অনুরাগীদের মধ্যে
বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আপডেট: জানিয়ে রাখি যে, HMS প্রিন্স অফ ওয়েলস রোলস-রয়েস MT 30 মেরিন গ্যাস টারবাইন দ্বারা চালিত হয়। এই টারবাইনটি জাহাজের ইন্টিগ্রেটেড ফুল ইলেকট্রিক প্রোপালশন (IFEP) সিস্টেমের প্রাণকেন্দ্র। এই সিস্টেমে ২ টি MT30 গ্যাস টারবাইন অল্টারনেটর রয়েছে। যার প্রতিটি ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এগুলিতে ৪ টি মিডিয়াম-স্পিড ডিজেল জেনারেটরও রয়েছে। একসঙ্গে, এগুলি মোট ১০৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যা একটি ছোট শহরকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট।
কেন এই যুদ্ধজাহাজ নৌবাহিনীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ: রোলস-রয়েসের UK অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ডাইরেক্টর অফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিউচার প্রোগ্রামস অ্যালেক্স জিনো জানিয়েছেন যে, তাঁরা করিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরে গর্বিত। তিনি বলেন যে, “ভারতে সফর ভারতীয় প্রতিরক্ষা গ্রাহকদের আমাদের বিশ্ব-নেতৃস্থানীয় নৌ প্রযুক্তির (Electric Warship) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি চমৎকার সুযোগ প্রদান করে।”
আরও পড়ুন: মাঠে নামতেই ফের বিতর্কের সম্মুখীন পৃথ্বী শ! শুরু তদন্ত, এবার কী করলেন তিনি?
তিনি আরও জানান যে, রোলস-রয়েস ভারতে তার সাপ্লাই চেন, উন্নত উৎপাদন এবং প্রতিরক্ষা কৌশলের ক্ষমতা সম্প্রসারণ করছে। যেটি তাদেরকে ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টায় একটি শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। CSG-র অন্যান্য জাহাজ, যার মধ্যে HMS রিচমন্ড এবং একটি অ্যাস্টুট-ক্লাস সাবমেরিনও রয়েছে সেগুলিতেও রোলস-রয়েস প্রপালশন সিস্টেম (Electric Warship) ব্যবহার করা হয়েছে। এই সিস্টেমগুলি স্পে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে পারমাণবিক বাষ্প উৎপাদন কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
রোলস-রয়েসের ওপর ভরসা: উল্লেখ্য যে, ভারতে ৯০ বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে, রোলস-রয়েস শক্তিশালী স্থানীয় অংশীদারিত্ব, অ্যাকাডেমিক সহযোগিতা এবং একটি শক্তিশালী ইঞ্জিনিয়ারিং ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠা করেছে। ১,৪০০ টিরও বেশি রোলস-রয়েস ইঞ্জিন বর্তমানে ভারতীয় বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর জন্য প্ল্যাটফর্মগুলিকে শক্তি প্রদান করে। ভারতে ৪,০০০-এরও বেশি কর্মসংস্থান করেছে এই সংস্থা।কোম্পানিটি বলেছে যে, বৈদ্যুতিকরণ এবং হাইব্রিড প্রযুক্তির ওপর তাদের মনোযোগ ভারতের ভবিষ্যতের নৌ প্রকল্পগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঠিক এই আবহেই ভারত তার প্রথম বৈদ্যুতিক যুদ্ধজাহাজ (Electric Warship) তৈরির দিকে এগিয়ে চলেছে।