বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করল ভারতীয় বায়ুসেনা । আশির দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার থেকে আমদানি করা শক্তিশালী এমআই-৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলিকে (যা এমআই-২৪-এর রফতানি সংস্করণ) পর্যায়ক্রমে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে এই খবর নিশ্চিত হওয়ার পরই প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণাত্মক সামর্থ্যে এক নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।
ভারতের (India) বায়ুসেনার হাতে এল দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এলসিএইচ ‘প্রচণ্ড’
বায়ুসেনার দীর্ঘ দিনের ‘মেরুদণ্ড’ হিসেবে পরিচিত এই হেলিকপ্টারগুলো, যেগুলোকে ‘ফ্লাই ট্যাঙ্ক’ ডাকনামে ডাকা হয়, তাদের স্থান দখল করবে ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার’ (এলসিএইচ) ‘প্রচণ্ড’। হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল) দেশের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে ২০১৭ সালেই এই হেলিকপ্টারের প্রোটোটাইপ তৈরি করে। ২০২২ সাল থেকে ইতিমধ্যে ১০টি ‘প্রচণ্ড’ বায়ুসেনার বহরে যুক্ত হয়েছে এবং আরও ১৬৫টির অর্ডার হ্যাল-কে দেওয়া হয়েছে।
প্রচণ্ড হেলিকপ্টারকে দেশীয় প্রযুক্তির একটি যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি হ্যাল-এর আগের সাফল্য ‘ধ্রুব’ (এএলএইচ) হেলিকপ্টারেরই অত্যাধুনিক সংস্করণ, যা গত দুই দশক ধরে তিন বাহিনীতেই সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রচণ্ড বিশেষভাবে হিমালয়ের মতো উচ্চতা ও প্রতিকূল পরিবেশে অভিযান চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে এর ৫.৮ টন ওজন ও শক্তিশালী টুইন-ইঞ্জিন ব্যবস্থা তাকে বিশেষ সক্ষমতা দান করে।
এই হেলিকপ্টারের অস্ত্রসজ্জা আধুনিক যুদ্ধের চাহিদা অনুযায়ী অত্যন্ত শক্তিশালী। এমআই-৩৫-এর মতো এতে রয়েছে ‘এয়ার-টু-সারফেস’ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া এর অস্ত্রাগারে রয়েছে ৭০ মিমি ১২-বার রকেট প্যাড এবং একটি অত্যন্ত নির্ভুল ২০ মিমি অটোক্যানন, যা ১১০ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে যেকোনো স্থির বা গতিশীল লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে পারে।

আরও পড়ুন:নিজের জীবনের চিন্তা করুন! এই ৩ দেশের রাষ্ট্রপতিকে হুমকি দিচ্ছেন ট্রাম্প?
এই সিদ্ধান্ত কেবল পুরনো প্ল্যাটফর্ম প্রতিস্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্বপ্নের দিক থেকেও এক বড় অর্জন। বিদেশী সরঞ্জামের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় শিল্প ও প্রযুক্তিকে শক্তিশালী করার এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানির সম্ভাবনাকেও উজ্জ্বল করছে। ‘প্রচণ্ড’-এর আগমন তাই ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।












