বাংলাহান্ট ডেস্ক: ২০২৫-এর প্রথম ছ’মাসে ভারতের (India) রফতানি খাতে বড় পরিবর্তনের সাক্ষী হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজার। আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের উপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করার পর থেকে দেশটির উপর নির্ভরতা কমাতে শুরু করেছেন ভারতীয় রফতানিকারীরা। এতদিন যেখানে যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার, সেখানে এখন এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের নতুন দেশগুলির দিকে ঝুঁকছেন রফতানিকারীরা। ফলে ভারতের বাণিজ্য বেসকেট নতুন বাজারে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং বৈচিত্র্য বাড়ছে।
ভারতের (India) রফতানি খাতে রেকর্ড বৃদ্ধি:
মার্কিন ট্যারিফ লাগু হওয়ার আগেই ঝুঁকি কমানোর কৌশল হিসেবে ভারতীয় (India) কোম্পানিগুলি বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেছিল। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে চলতি বছরে। ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশে ভারতীয় বস্ত্র, রত্ন-আভরণ এবং সামুদ্রিক পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনাম ও বেলজিয়ামের বাজারে ভারতীয় রফতানির প্রবৃদ্ধি ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং চীনের মতো ঐতিহ্যগত এশীয় বাণিজ্য সহযোগীরাও ভারতীয় পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:একাদশীতে ভক্তদের প্রবল ভিড়! অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামে ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৯
সামুদ্রিক পণ্য খাতে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে এই খাতে ভারতের (India) রফতানি প্রায় ১৫.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলারে। এশিয়া ও ইউরোপে চাহিদা বৃদ্ধিই এই প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভিয়েতনাম, বেলজিয়াম ও থাইল্যান্ড ভারতীয় সামুদ্রিক পণ্যের অন্যতম দ্রুত সম্প্রসারিত বাজারে পরিণত হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনও এই খাতে ভারতের সবচেয়ে বড় একক বাজার হিসেবে রয়েছে।
ভারতের (India) বস্ত্র শিল্পেও ধীরে হলেও স্থিতিশীল উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরুতে বস্ত্র রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১.২৩ শতাংশ, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাতই এখানে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, যেখানে ভারতীয় বস্ত্র রফতানি বেড়েছে ৮.৬ শতাংশ। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন এবং মিশরেও ভারতীয় টেক্সটাইলের চাহিদা বেড়েছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত।

আরও পড়ুন:পর পর নিম্নচাপ! দক্ষিণবঙ্গে এ বছর আর শীত পড়বে না? ‘খারাপ খবর’ দিল আবহাওয়া দপ্তর
রত্ন ও আভরণ শিল্পও আশার আলো দেখাচ্ছে। ২০২৫-এর প্রথম ছ’মাসে এই খাতে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১.২৪ শতাংশ এবং মোট রফতানি পৌঁছেছে ২২.৭ বিলিয়ন ডলারে। সংযুক্ত আরব আমিরাত এই খাতে ভারতের সবচেয়ে বড় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, যেখানে রফতানি বেড়েছে ৩৭ শতাংশেরও বেশি। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব এবং কানাডায়ও ভারতীয় (India) রত্ন-আভরণের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন চীন ও মেক্সিকোও নতুন উচ্চ প্রবৃদ্ধির বাজার হিসেবে উঠে আসছে।
সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে ভারতীয় রফতানি খাতে স্বল্পমেয়াদি চাপ থাকলেও, কৌশলগত বাজার বৈচিত্রকরণ ভারতকে নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে। ব্যবসায়িক মহলের আশা, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ভারতের (India) রফতানি ভবিষ্যতে আরও স্থিতিশীল ও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে।













