বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তান (Pakistan) ভারত সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেই—এমনই দাবি করলেন সে দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অব ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (DG ISPR) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট অনেকটাই কম, এবং দেশের আর্থিক অবস্থার কারণে পাকিস্তানের সেই বিলাসিতা নেই যে তারা সীমাহীন অর্থ ব্যয় করতে পারবে। শনিবার ইসলামাবাদে এক সাংবাদিক বৈঠকে জেনারেল চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান তার সামরিক সক্ষমতাকে ‘সুষম ও কার্যকরভাবে’ বিকশিত করছে এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তারা যে কোনও দেশ থেকেই গ্রহণ করতে প্রস্তুত, তা পূর্ব কিংবা পশ্চিম—যেখান থেকেই হোক না কেন।
অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ভারতের থেকে পিছিয়ে পাকিস্তান! (Pakistan)
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে পাকিস্তান (Pakistan) তার প্রতিরক্ষার জন্য ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮,৫১৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৮৬.১ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৭.৫ ট্রিলিয়ন টাকা—যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি। এই বিশাল পার্থক্যই দুই দেশের কৌশলগত অবস্থান এবং ভূরাজনৈতিক অগ্রাধিকারের প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকদের দাবি।
আরও পড়ুন:ড্রোনের সঙ্গে অ্যাকশনে হেলিকপ্টার! সমুদ্রে মোতায়েন যুদ্ধজাহাজও, ইলিশ বাঁচাতে বড় পদক্ষেপ বাংলাদেশের
ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম প্রতিরক্ষা ব্যয়কারী দেশ। গত এক দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারে। এই সময়ের মধ্যে ভারত সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণে বিপুল বিনিয়োগ করেছে—আধুনিক যুদ্ধবিমান, রাডার সিস্টেম, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নজর দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে, পাকিস্তান (Pakistan) তার সীমিত সম্পদের মধ্যেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রাখছে। জেনারেল চৌধুরী বলেন, “আমরা আমাদের প্রয়োজন মতো প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম অর্জনে মনোযোগী, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা কোনও প্রতিযোগিতায় আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নয়।”
বর্তমানে চীন পাকিস্তানের (Pakistan) সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। পাকিস্তানের মোট সামরিক সরঞ্জামের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে চীন থেকে। চীন থেকে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই J-10C এবং JF-17 যুদ্ধবিমান, টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগেট, HQ-9 ও HQ-16 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ড্রোন এবং বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে এই সরঞ্জামের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন:অর্থনীতিতে যুক্ত হবে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার! ভারতের 6G প্ল্যানের প্রসঙ্গে মিলল বড় আপডেট
ভারতের বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমর প্রীত সিং জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর সময় ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের (Pakistan) একাধিক বিমান গুলি করে নামায়। তার মধ্যে ছিল পাকিস্তানের F-16 এবং JF-17 যুদ্ধবিমান, পাশাপাশি একটি C-130 পরিবহন বিমানও ধ্বংস করা হয়। অমর প্রীত সিংয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অভিযান ভারতের বিমানবাহিনীর আধুনিক সরঞ্জাম এবং নির্ভুল হামলার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান (Pakistan) যদিও প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অস্বীকার করছে, কিন্তু ভারতের দ্রুত অগ্রগতি এবং চীনের সহায়তায় নিজেদের প্রতিরক্ষা কাঠামো পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদও কার্যত সেই প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে উঠছে—যদিও তারা তা স্বীকার করছে না।