বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি অত্যন্ত বড় আপডেট সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সাশ্রয়ী ডেটা সেন্টার (Data Center) নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বব্যাপী প্রথমসারিতে রয়েছে। কোটাক মিউচুয়াল ফান্ডের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতে ডেটা সেন্টার স্থাপনের খরচ অন্যান্য বড় দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। এই কারণেই বিদেশি কোম্পানিগুলি এখন ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং দেশের ডিজিটাল শক্তি একটি নতুন গতি পাচ্ছে।
বিশ্বের সবথেকে সস্তার ডেটা সেন্টারে (Data Center) পরিণত হচ্ছে ভারত:
১ ওয়াটের ডেটা সেন্টার ৭ ডলারে তৈরি করা হচ্ছে: রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে ১ ওয়াটের একটি ডেটা সেন্টার (Data Center) তৈরি করতে মাত্র ৭ ডলার খরচ হয়। এই খরচ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। জানিয়ে রাখি যে, প্রযুক্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা চিনে প্রতি ওয়াটের ডেটা সেন্টারের দাম ৬ ডলার। অর্থাৎ, ভারতের তুলনায় কিছুটা কম হলেও এই তালিকায় ভারতের অবস্থান এখনও শক্তিশালী। কারণ অন্যান্য দেশের খরচ অনেকটাই বেশি। জাপানে, প্রতি ওয়াটের দাম প্রায় ১৪ ডলার। ব্রিটেনে, প্রতি ওয়াটের দাম প্রায় ১১ ডলার। আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতেও প্রতি ওয়াটের দাম প্রায় ১০ ডলার। এমতাবস্থায়, এই কম খরচের জন্য ভারত বিশ্বজুড়ে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে আকৃষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে চিনকেও এক্ষেত্রে টেক্কা দিতে পারে ভারত।
হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে: উল্লেখ্য যে, ডেটা সেন্টার হল এমন জায়গা যেখানে প্রচুর পরিমাণে ডিজিটাল তথ্য, বা ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রসেস করা হয়। ২০১৯ সালে, ভারতে মাত্র ৫ টি বৃহৎ হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার ছিল। তবে, ২০২৪ সালের মধ্যে, এই সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ৩ গুণ বৃদ্ধি। যার স্পষ্ট অর্থ হল ভারতে ইন্টারনেট, অ্যাপস, অনলাইন পরিষেবা এবং ডিজিটাল পেমেন্টের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের কারণে ডেটা স্টোরেজের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, ডেটা সংরক্ষণের (Data Center) জন্য বড় কোম্পানিগুলিকে ভাড়া দেওয়া কোলোকেশন স্পেসেও গত ৫ বছরে ৪ গুণ বৃদ্ধি দেখা গেছে।
রাজ্য সরকারগুলিও সাহায্য করছে: একটি ডেটা সেন্টার (Data Center) স্থাপনের খরচ কেবল যন্ত্রপাতি এবং ভবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদ্যুৎ, কানেক্টিভিটি, জমি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এখন রাজ্য সরকারগুলিও এতে সাহায্য করছে।
* তামিলনাড়ু ২০২১ সালে একটি নীতি প্রণয়ন করে। যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলিকে বিদ্যুতের ওপর ১০০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করা হয়। দ্বৈত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ৫০ শতাংশ হুইলিং চার্জও মকুব করা হয়েছে।
* মহারাষ্ট্র ২০২৩ সালে একটি নীতি চালু করে। যেখানে আজীবন বিদ্যুৎ ছাড় এবং ৫ বছরের জন্য প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়।
এইভাবে, প্রতিটি রাজ্য বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার জন্য আকর্ষণীয় অফার উপলব্ধ করেছে।
* উত্তরপ্রদেশ ওপেন অ্যাক্সেস বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন চার্জ সম্পূর্ণ মকুব করেছে।
* তেলেঙ্গানা ২০১৬ সালে একটি নীতি প্রণয়ন করে। যার মাধ্যমে রিনিউয়েবল এনার্জি (সৌর বা বায়ু শক্তি) এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুন: সচিনের একটি পরামর্শেই বদলে গিয়েছে গিলের টেস্ট কেরিয়ার! কী বলেছিলেন “ক্রিকেটের ঈশ্বর”?
আইনগুলিও ডেটা সেন্টারগুলিকে উৎসাহিত করছে:
ভারতে ডেটা সেন্টারগুলি (Data Center) কেবল খরচ কম বা ছাড় পাওয়া যায় বলেই সম্প্রসারিত হচ্ছে না। সরকারের প্রণীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনও এর কারণ।
* ২০১৮ সালে, RBI নির্দেশ দিয়েছিল যে, পেমেন্ট কোম্পানিগুলিকে শুধুমাত্র ভারতে ভারতীয় তথ্য রাখতে হবে।
*২০২৩ সালে SEBI প্রত্যেক আর্থিক কোম্পানির জন্য একই নিয়ম কার্যকর করে।
* DPDP আইন ২০২৩ (ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রটেকশন)-এর অধীনে এখন, প্রয়োজনে সরকার বলতে পারে যে ভারতের তথ্য দেশের বাইরে পাঠানো উচিত নয়।
এইসব আইনের কারণে কোম্পানিগুলিকে ভারতে তাদের ডেটা সেন্টার তৈরি করতে বাধ্য করা হয় এবং বিষয়টি বাধ্যতামূলকও করা হয়।
আরও পড়ুন: কবে এশিয়া কাপের ট্রফি পাবে টিম ইন্ডিয়া? ACC-র বৈঠকে মিলল সমাধান?
বর্তমানে মাত্র ৩ শতাংশ ডেটা সেন্টার বিদ্যমান: এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ৩ শতাংশ ডেটা সেন্টার (Data Center) ভারতে অবস্থিত। যদিও বিশ্বব্যাপী ডেটা ব্যবহারের ২০ শতাংশেররও বেশি ভারত ব্যবহার করে। যেটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ভারতে ডেটা সেন্টার তৈরির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত, দেশের বেশিরভাগ তথ্য বিদেশে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে কম খরচ, সরকারি সহায়তা এবং কঠোর আইনের কারণে, ভারত দ্রুত বিশ্বের পরবর্তী “ডেটা হাব” হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে।