বাংলা হান্ট ডেস্ক: নেপাল (Nepal) ও ভারতের (India) মধ্যে সবসময়ে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকলেও কিছু সময় আগে চিনের (China) প্রভাবে ভারতের সাথে সেই সম্পর্কে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। মূলত, তখন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বে চিনের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটে নেপাল। তবে বর্তমানে নেপালে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে শের বাহাদুর দেউবা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এমতাবস্থায়, নেপাল ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছে যে তারা ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক নষ্ট করে থাকতে পারবে না। কারণ এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদেরকেই। আর এই কারণেই এখন নেপাল আবারও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছে।
ভারত দু’টি বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পন্ন করবে: প্রকৃতপক্ষে, নেপাল এখন ভারতকে তার দু’টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ করার দায়িত্ব দিয়েছে। জানা গিয়েছে, নেপাল তার দু’টি বহুপ্রতিক্ষিত বিদ্যুৎ প্রকল্প ওয়েস্ট সেটি হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্ট এবং সেটি রিভার হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্টের কাজ ভারতীয় কোম্পানি NHPC লিমিটেডকে অর্পণ করেছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই দু’টি প্রকল্প চিন সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জিনপিংয়ের দেশ।
এমতাবস্থায়, চিনের প্রতারণার পর নেপাল এখন ভারতের সাহায্য চাইছে। এই প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, NHPC লিমিটেড, নেপাল বিনিয়োগ বোর্ডের (IBN) সাথে একটি সমঝোতাপত্র (MoU) স্বাক্ষর করেছে। যার মাধ্যমে ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পশ্চিম সেটি এবং ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন SR-6 জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করা হবে। এই প্রকল্পগুলির আনুমানিক ব্যয় হবে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার।
পাশাপাশি, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে, গত ১৮ আগস্ট, NHPC-র চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ কে সিং এবং IBN-এর প্রধান কর্মকর্তা সুশীল ভাট্টা কাঠমান্ডুতে ওই সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি, ওই অনুষ্ঠানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবাও উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় তিনি নেপালের উন্নয়নে ভারতের সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। দেউবা বলেন, এই চুক্তি নেপাল ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে।
চিন তার স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে চেয়েছিল: জানিয়ে রাখি যে, ২০১২ সালে একটি চিনা কোম্পানি পশ্চিম সেটি প্রকল্পের কাজে হাতে দেয়। ছয় বছর ধরে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল চিনা কোম্পানিটি। কিন্তু ২০১৮ সালে হঠাৎ করেই কোম্পানিটি ওই প্রজেক্ট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এমতাবস্থায়, পশ্চিম সেটি প্রকল্প নিয়ে চিন ও নেপালের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মূলত, চিন এই প্রকল্প নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে চেয়েছিল। পাশাপাশি, সেটি তৈরি হওয়ার পরে বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য কি হবে তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। নেপাল বিদ্যুতের যে দাম নির্ধারণ করেছিল তা অপর্যাপ্ত বলে মনে করেছিল চিনা কোম্পানিটি। পাশাপাশি, চিন সেই দাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু, নেপাল তা মেনে নেয়নি। যার কারণে শেষ পর্যন্ত ওই প্রকল্প থেকে সরে আসে চিন।
এদিকে, গত ১৬ মে প্রধানমন্ত্রী মোদীর লুম্বিনী সফরের পর এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত, এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর এর থেকে অনেক লাভবান হতে চলেছে নেপাল। প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়ার পরে, নেপাল তার সম্পূর্ণ জলবিদ্যুৎ ক্ষমতা ব্যবহার করে ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করলে ২০৩০ সালে প্রতি বছর ৩১ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে। অপরদিকে ২০৪৫ সাল নাগাদ, এটি প্রতি বছরে ১.০৬৯ লক্ষ কোটি টাকাতে বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, একটা সময় নেপালকে নিজেদের খপ্পরে ফেলেছিল চিন। পাশাপাশি, নেপালও চিনের কথা শুনে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে উদ্যত হয়। শুধু তাই নয়, ২০২০ সালে, অলি সরকার নেপালের মানচিত্র পরিবর্তন করে এবং ভারতীয় সীমান্তে অবস্থিত লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরার উপর তাদের অধিকার জাহির করতে শুরু করে। তবে নেপালের সামনেও চতুর চিনের আসল রূপ খুলতে শুরু করেছে। এই কারণেই নেপাল এখন আবারও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায়। এমতাবস্থায়, ভারতও নেপাল থেকে চিনের চিহ্নগুলি মুছে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে এবং তাদের ছেড়ে যাওয়া প্রকল্পগুলিকে একাই শেষ করছে।