বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: এশিয়া কাপ যখন শুরু হয়েছিল, তখন এমনটা যে হতে পারে তা হয়তো কেউই ভাবেননি। একদিকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসী ভারত। অপরদিকে দেশের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে না পারার লজ্জা নিয়ে প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের কাছে বিশ্রী মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কা। তখন যদি অতি বড় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ভক্তকেও বলা হতো যে ভারত ফাইনালে যাবে না এবং শ্রীলঙ্কা ফাইনালের জন্য ফেভারিট তাহলে হয়ত তারা হেসেই উড়িয়ে দিতো সেই কথা। কিন্তু সেটাই এখন ঘোর বাস্তব।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বেজায় বেকায়দায় পড়েছিল ভারতীয় দল। দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ৬ রানের ব্যক্তিগত স্কোরে ফিরে গিয়েছেন লোকেশ রাহুল। চেন্নাই সুপার কিংসের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হাতে তৈরি থিকসেনার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার স্পিনারের ফুলটস বল স্টেপ আউট করে খেলতে গিয়ে প্যাডে লাগে রাহুলের। যদিও প্যাডে আগে লেগেছে বলটি নাকি ব্যাটে আগে লেগেছে, সেই নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা বিতর্ক করতেই পারেন। থার্ড আম্পায়ার তাকে নট আউট দেওয়ার মতো কোনও জোরালো প্রমাণ না পাওয়ায় রাহুলকে গত ম্যাচে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেখিয়েও এই ম্যাচে ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হয়েছে।
কিন্তু এর চেয়েও বড় ধাক্কা ভারতের লাগে তৃতীয় ওভারে। পরপর দুই ম্যাচে অর্ধশতরান করে হয়তো একটু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন বিরাট কোহলি। ঠিক মতো সেট না হয়েই শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার দিলশান মধুশঙ্কার বলে আড়াআড়ি ব্যাট চালাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শুন্য রানেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন বিরাট কোহলি। ফলে মরণ-বাঁচন ম্যাচে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত।
এরপর সূর্যকুমার যাদবের সাথে মিলে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে টানার কাজটা শুরু করেন রোহিত শর্মা। সূর্যকুমার একটা দিক ধরেছিলেন, রোহিত শর্মা শ্রীলঙ্কার বোলারদের আক্রমণ করেছিলেন। ৩২ বলে নিজের অর্ধশতরান সম্পূর্ণ করেন তিনি। ভারতীয় ব্যাটাদের বাকিরা আক্রমণ করতে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বোলারদের সঠিক লাইন লেংথে বল করে যাওয়া তার একটি বড় কারণ। কিন্তু রোহিত শর্মার মধ্যে সেই অস্বস্তি দেখা যায়নি। ৪১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা সহযোগে ৭২ রান করে করুণারত্নের বলে আউট হয়েছেন তিনি। কিন্তু রোহিত শর্মা দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও সূর্যকুমার (৩৪), হার্দিক পান্ডিয়া (১৭), রিশভ পন্থ (১৭), দীপক হুডারা (৩) ভারতীয় দলকে বড় স্কোরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। প্রশংসা প্রাপ্য করুনারত্নে, মধুশঙ্কা, থিকসেনাদের। প্রত্যেকে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। শেষদিকে অশ্বিনের ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ভর করে ২০ ওভারে ১৭৩ রান স্কোর বোর্ডে তুলতে পারে ভারত।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারে ভুবনেশ্বরের বোলিং দেখেশুনে খেললেও দ্বিতীয় ওভার থেকে ধ্বংসাত্মক মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন নিশঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিস। যদি পেরে দ্বিতীয় এবং তাদের ইনিংসের চতুর্থ ওভারে তারা নেন ১৮ রান। ওই ওভারটাই শ্রীলঙ্কার রান তাড়া করার রিংটোনটা সেট করে দেয়। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দুই ওপেনারই অর্ধশতরান করেন। যখন মনে হচ্ছিল যে সমস্ত আশা শেষ ঠিক তখনই যুবেন্দ্র চাহাল এবং রবি অশ্বিন ১৩ রানের ব্যবধানে ৪ টি উইকেট তুলে ম্যাচটিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুই ওপেনার সহ তিন নম্বরে নামা আশালঙ্কার উইকেট নেন চাহাল। তারপর শ্রীলঙ্কার ইনিংসের হাল ধরেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা এবং আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে খেলে যাওয়া রাজাপক্ষ। দুজনেই প্রথমদিকে কিছুটা সতর্ক ব্যাটিং করে তারপর আক্রমণের রাস্তা বেছে নেন। শেষ দুই ওভারে জিততে গেলে শ্রীলংকার প্রয়োজন ছিল ২১ রান। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ১৯ তম ওভারে পরিকল্পনাহীন বোলিং করে ১৪ রান দিয়ে শ্রীলঙ্কার হাতে ম্যাচ তুলে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। শেষ ওভারে অস্থির একের পর এক ইয়রকার করে মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন বটে কিন্তু মাত্র ৭ রান বাকি ছিল দ্বীপরাষ্ট্রের যা তারা ১ বল বাকি থাকতেই তুলে নেয়। এরপর শ্রীলঙ্কার ফাইনাল খেলা কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল। অংকের বিচারে এখনো টিকে থাকলেও ভারতের বিদায় নেওয়াও প্রায় নিশ্চিত।