বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের গোপন পরমাণু পরীক্ষার অভিযোগ ঘিরে বিতর্কের মাঝেই এবার মুখ খুলল ভারত (India)। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন পাকিস্তান গোপনে পরমাণু পরীক্ষা চালাচ্ছে, এরপরই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। শুক্রবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “চোরাগোপ্তা এবং বেআইনি পরমাণু কার্যক্রমের বিষয়টি পাকিস্তানের ইতিহাসেরই অংশ। গত কয়েক দশক ধরে চোরাচালান, রফতানি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন এবং গোপন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পাকিস্তান এই পরমাণু নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। একিউ খান নেটওয়ার্ক— যা পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির মূলে রয়েছে— সেটাই এই বেআইনি কার্যকলাপের প্রতীক।”
ট্রাম্পের পাকিস্তানের পরমাণু পরীক্ষা মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলল ভারত (India)
জয়সওয়াল আরও বলেন, “ভারত (India) সবসময়ই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে পাকিস্তানের এই ইতিহাস তুলে ধরেছে। সেই প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য আমরা লক্ষ্য করেছি।” উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আমেরিকার সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, “আমেরিকা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পরমাণু পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। কিন্তু পাকিস্তান, রাশিয়া, চিন— এই দেশগুলি গোপনে মাটির নিচে পরমাণু পরীক্ষা চালাচ্ছে। এমনকি উত্তর কোরিয়াও নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করছে।”
আরও পড়ুন: তৈরি হবে সমুদ্রের তলদেশের ম্যাপ! জোরদার হবে নজরদারিও, ভারতীয় নৌবাহিনীতে এন্ট্রি নিল INS Ikshak
ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, “ওরা এসে কাউকে জানায় না। গোপনে মাটির অনেক গভীরে পরমাণু পরীক্ষা চালানো হয়। বাইরে থেকে শুধু ভূমিকম্পের মতো কম্পন অনুভব করা যায়।” মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। তবে ট্রাম্পের এই অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা কোনও পরমাণু পরীক্ষা করিনি এবং প্রথম এমন কিছু শুরু করবও না।” পাকিস্তানের দাবি, তারা সবসময়ই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে দায়িত্বশীল অবস্থান নিয়েছে এবং ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অন্যদিকে এবার ট্রাম্পের এই বক্তব্যকেই হাতিয়ার করে পাকিস্তানকে বিঁধল ভারত (India)।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ভারতের (India) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংও মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমেরিকা বা পাকিস্তান কী করছে, সেই চাপে পড়ে ভারত কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। আমরা সঠিক সময় যা প্রয়োজন মনে করব, তাই করব।” রাজনাথের এই মন্তব্যকে অনেকেই ভারতের পরমাণু নীতির ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন।

আরও পড়ুন: অর্থনীতিতে আসবে জোয়ার! ব্যাঙ্কগুলির জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিল RBI, কী জানালেন গভর্নর?
ভারতের (India) বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সন্দেহ নতুন কিছু নয়। অতীতে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামাবাদের গোপন পরমাণু বাণিজ্য ও নেটওয়ার্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একিউ খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান একসময় উত্তর কোরিয়া, ইরান ও লিবিয়ার সঙ্গে পরমাণু প্রযুক্তি বিনিময়ের অভিযোগে জড়িয়েছিল।
বর্তমানে ট্রাম্পের এই মন্তব্য সেই পুরনো আশঙ্কাকেই আবার সামনে এনে দিয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্যে স্পষ্ট— পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন। একইসঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে এও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষায় ভারত (India) নিজের নীতিতে অবিচল থাকবে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, রাশিয়া ও পাকিস্তান— এই দেশগুলির মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া পরমাণু প্রতিযোগিতা বিশ্বশান্তির জন্য বিপজ্জনক। আর সেই পরিস্থিতিতে ভারতের সতর্ক অবস্থান কূটনৈতিকভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।












