বাংলা হান্ট ডেস্ক:- ফের একবার মিলল ভারত রাশিয়ার (India-Russia) বন্ধুত্বের নিদর্শন। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) চালিয়ে কড়া জবাব দেয়। এই অভিযানে ভারতের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিল রাশিয়া নির্মিত S-400 ট্রায়াম্ফ মিসাইল সিস্টেম। অত্যাধুনিক এই ভূমি থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ও চিনা প্রযুক্তিতে নির্মিত মিসাইল ধ্বংস করে দেয়। বেছে বেছে নিশানা করে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করে দেয় S-400, যার ফলে কার্যত চাপে পড়ে ইসলামাবাদ। এই পরিস্থিতিতে ভারত আরও S-400 কিনতে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব (India-Russia)
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই কিছু সংখ্যক S-400 সিস্টেম রয়েছে। তবে সেই সংখ্যা আরও বাড়ানো নিয়ে বর্তমানে আলোচনা চলছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে রুশ সংবাদ সংস্থা টাস জানিয়েছে, রাশিয়া ও ভারতের (India-Russia) মধ্যে এই মুহূর্তে নতুন করে S-400 সরবরাহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি-টেকনিক্যাল কোঅপারেশনের প্রধান দিমিত্রি শুগায়েভের কথায়, এই সিস্টেমের মাধ্যমে ভারতকে সহযোগিতা আরও গভীরতর করা সম্ভব।
আরও পড়ুন:- ৩-৪ হাজার কোটি টাকার নিয়োগ দুর্নীতি! ‘দাগি’ তালিকা নিয়ে বিস্ফোরক বাগ কমিটির আইনজীবী
২০১৮ সালে ভারত ও রাশিয়ার (India-Russia) মধ্যে পাঁচটি S-400 ইউনিট কেনার জন্য ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত জটিলতার কারণে এই ডেলিভারিতে দেরি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, শেষ দুটি S-400 ইউনিট ভারত পাবে ২০২৬ ও ২০২৭ সালের মধ্যে। এই সিস্টেম শত্রুর মিসাইল, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ইত্যাদি দূর থেকে শনাক্ত করে আকাশেই ধ্বংস করতে পারে। ফলে সীমান্তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটি ভারতের জন্য এক বিরাট কৌশলগত সম্পদ।
সম্প্রতি চিনের আয়োজিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সামিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi ) ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক মহলে চোখে পড়ে। পুতিন মোদীকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন, জবাবে মোদী বলেন, কঠিন সময়েও ভারত-রাশিয়া (India-Russia) একে অপরের পাশে থেকেছে। এই বক্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা এবং পারস্পরিক আস্থারই প্রতিফলন। এর মধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকেও মোদীর সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলতে দেখা যায়, যেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ (Shehbaz Sharif ) কার্যত ব্রাত্য ছিলেন।
রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানান, আমেরিকা বহুবার ভারতকে রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ করতে চাপ দিয়েছিল, কিন্তু ভারত সেই চাপে মাথা নত করেনি। রাশিয়া তা উপলব্ধি করে এবং এজন্য তারা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ (India-Russia)। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (SIPRI)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের ৩৬ শতাংশ অস্ত্র এসেছে রাশিয়া থেকে, দ্বিতীয় স্থানে ফ্রান্স (৩৩ শতাংশ) ও তৃতীয় স্থানে ইজরায়েল।
আরও পড়ুন:- দীপাবলির আগেই কি স্বস্তি সাধারণের? GST সংস্কারের পথে দেশ, আজ থেকে শুরু কাউন্সিলের বৈঠক
S-400 কেনা ভারত-রাশিয়ার (India-Russia) শুধু প্রতিরক্ষা কৌশল নয়, এটি একাধিক কূটনৈতিক বার্তাও বহন করে। পাকিস্তান ও চিনকে চাপে রাখা, এবং আমেরিকাকে বার্তা দেওয়া যে রাশিয়া ভারতের প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার—এই সমস্ত দিক থেকেই নতুন করে S-400 কেনার আলোচনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।