বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি উজবেকিস্তানের (Uzbekistan) সমরকন্দে (Samarkand) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) সাক্ষাৎ খবরের শিরোনামে উঠে আসে। জানা গিয়েছে, ওই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনকে পরামর্শ দেন মোদী । এমতাবস্থায়, সারা বিশ্ব থেকে এই পরামর্শের প্রশংসা করা হচ্ছে। মূলত, এই দুই নেতার বৈঠক এমন এক সময়ে হল যখন পশ্চিমের কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানির জন্য ভারতের সমালোচনা করেছিল। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকাসহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ভারত ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিপুল সাশ্রয় করেছে।
বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারতের সিদ্ধান্ত: আসলে, পশ্চিমী দেশগুলির বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমতাবস্থায় এই সিদ্ধান্তের জেরে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। এই প্রসঙ্গে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়েছে যে, ভারত চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে রাশিয়া থেকে ৬.৬ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। পাশাপাশি, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এটি বেড়ে ৮৪.২ মিলিয়ন টন হয়েছে। এই সময়ে রাশিয়াও প্রতি ব্যারেলে ৩০ ডলারের ছাড় দিয়েছে। এই কারণে প্রথম ত্রৈমাসিক এক টন অপরিশোধিত তেল আমদানিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৯০ ডলার।
৩৫ হাজার কোটি টাকা লাভ: এরপরে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ওই দাম ৭৪০ ডলারে নেমে আসে। যার ফলে ভারত মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছে। ২০২২ সালে রাশিয়া থেকে সস্তা তেল আমদানির পরিমান প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই মোট বাণিজ্য ১১.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এটি রেকর্ড তৈরি করে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, চিনের পর রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত।
রাশিয়া তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ: রাশিয়া জুলাই মাসে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছিল। মূলত, সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে দেয় তারা। যদিও, আগস্টের মধ্যে সৌদি আরব ফের তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করে এবং এখন রাশিয়া ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছে, এপ্রিল-জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের খনিজ তেল আমদানি আট গুণ বেড়ে ১১.২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।
ভারতের জন্য তেলের দাম গুরুত্বপূর্ণ: মার্চের পর থেকে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেলের আমদানি বাড়ায়। এমতাবস্থায়, মোট বাণিজ্য ১২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে পোঁছে গিয়েছে। যা গত বছর নাগাদ ১.৫ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি ছিল। এর মধ্যে গত জুন ও জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের। এমতাবস্থায়, তেলের দাম ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই আমদানি মোট চাহিদার ৮৩ শতাংশ পূরণ করে। যে কারণে ভারত সরকার এই খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
২০২১-২২ সালে দেশের তেল আমদানি বিল দ্বিগুণ হয়েছে: এই প্রসঙ্গে “টাইমস অফ ইন্ডিয়া” একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এবার এমন একটি তথ্য সামনে এসেছে যে, দেশের তেল আমদানি বিল ২০২১-২২ সালে দ্বিগুণ হয়ে ১১৯ ডলার বিলিয়ন হয়েছে। এমতাবস্থায়, এটি সরকারি অর্থের উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং মহামারীর পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকেও প্রভাবিত করেছে। সম্প্রতি, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন একটি সেমিনারে বলেছিলেন যে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা কৌশলের একটি অংশ। পাশাপাশি, অন্যান্য দেশগুলিও এই একই কাজ করছে বলেও জানান তিনি।