বাংলাহান্ট ডেস্ক: ‘ঘুরপথে’ রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে ভারত (India)! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বৃহত্তম দুই তেলশোধনকারী সংস্থা রসনেফট এবং লিউকঅয়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই কঠোর অবস্থানের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন ফেলে দিয়ে জানা গেল, ভারতের শীর্ষ তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি) ‘ঘুরপথে’ রুশ তেল আমদানির বরাত দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি, আগামী ডিসেম্বরেই পাঁচটি জাহাজে করে রুশ অপরিশোধিত তেল ভারতে ঢুকবে। নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়ার পরই বিশ্বের বহু বড় রিফাইনারি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ রাখলেও ভারতের এই সিদ্ধান্ত নতুন কূটনৈতিক প্রশ্ন জাগিয়েছে।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কিনছে ভারত (India)
ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড, এইচপিসিএল মিত্তাল এনার্জি, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বড় সংস্থাগুলি নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ তেল আমদানি স্থগিত করেছে। তবে আইওসির অর্থ বিষয়ক প্রধান অনুজ জৈন জানিয়েছেন, তাদের সংস্থা এমন রুশ তেল কিনবে যা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই এমন কার্যনির্বাহী সংস্থার মাধ্যমে রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে কোন সংস্থার মাধ্যমে এই আমদানি হচ্ছে তা প্রকাশ করেননি তিনি। ফলে জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে যে ভারত (India) আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েই অভ্যন্তরীণ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে।
আরও পড়ুন ২০২৬-এ আশ্রয় মিলবে মাত্র ৭৫০০ জন বিদেশিদের, শরণার্থীদের সংখ্যায় নজিরবিহীন কঠোরতা ট্রাম্পের
পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করবে। তবে দিল্লি সরাসরি এই দাবি খণ্ডন করে। বিদেশমন্ত্রক জানায়, ট্রাম্প যে ফোনালাপের কথা বলেছেন তার কোনও অস্তিত্বই নেই। তবুও, ট্রাম্প নিজের অবস্থান বজায় রেখে বলেন, “চিন ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। ভারতও (India) খুব শিগগিরই পুরোপুরি বন্ধ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।”
কিন্তু বাস্তব দৃশ্যপট আরও অন্য কথা বলছে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে জানা যায়, রাশিয়া থেকে ভারতের (India) উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি তেলবাহী জাহাজ মাঝপথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘ফুরিয়া’ নামের সেই জাহাজটি ডেনমার্ক ও জার্মানির মাঝ দিয়ে গুজরাটের সিক্কা বন্দরের পথে আসছিল। ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল বহনকারী ওই ট্যাঙ্কারটি ২০ অক্টোবর রাশিয়ার প্রিমর্স্ক বন্দর থেকে ছাড়ে। নভেম্বরের মাঝামাঝি ভারতে পৌঁছানোর কথা থাকলেও হঠাৎই তার পথ বদলে দেওয়া হয়, যা যে কোনও এক পক্ষের তীব্র চাপের ইঙ্গিত দেয়।

আরও পড়ুন:তিক্ততা ভুলে স্বাভাবিকের পথে সম্পর্ক! ১০ বছরের প্রতিরক্ষা কাঠামোতে সই দিল দিল্লি-ওয়াশিংটন
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যেই ভারত (India) তার জ্বালানি স্বার্থ ও কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। রুশ তেল তুলনায় সস্তা হওয়ায় ভারত দীর্ঘদিন ধরেই তা আমদানি করে এসেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখেও ভারতের বিকল্প জ্বালানি উৎস খোঁজার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। তবে ‘ঘুরপথে’ রুশ তেল কেনা নিয়ে ভারতের কৌশল আন্তর্জাতিক পরিসরে নতুন প্রশ্ন তুলে দিল—মিত্রতা নাকি বাস্তববাদ? এখন দেখার, ওয়াশিংটন–মস্কো সংঘাতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে ভারত কোথায় দাঁড়ায় এবং এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে কূটনৈতিক চাপে রূপ নেয় কি না।













