বাংলা হান্ট ডেস্ক: মার্কিন “শুল্কবোমা”-র আবহেই এবার একটি অত্যন্ত বড় আপডেট সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ভারত (India) এবার রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের ওপর আগের চেয়েও বেশি ছাড় পাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারত সহ একাধিক দেশের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন। তা সত্ত্বেও, ভারত এবার রাশিয়ার ইউরাল গ্রেড তেল প্রতি ব্যারেলে ৩-৪ ডলার সস্তায় পাচ্ছে। ব্লুমবার্গের এক রিপোর্ট অনুসারে, রাশিয়া সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে জাহাজ লোডিংয়ের দাম আরও কমিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে যেখানে ছাড় ছিল মাত্র ১ ডলার, এখন তা বেড়ে ২.৫ ডলারেরও বেশি হয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে আসা তেলের দাম ব্রেন্ট ক্রুডের তুলনায় ব্যারেল প্রতি প্রায় ৩ থেকে ৫ ডলার বেশি। এই কারণে, রাশিয়ার তেল কেনা ভারতের জন্য আরও বেশি লাভজনক প্রমাণিত হচ্ছে।
ভারতকে (India) আরও সস্তায় তেল দেবে রাশিয়া:
মোদী-পুতিন বৈঠকের প্রভাব: সম্প্রতি SCO সম্মেলনের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলেছেন। এই বৈঠকটি অত্যন্ত গোপন এবং প্রভাবশালী বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আলোচনার বিষয়বস্তু জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে, ওই বৈঠকের ইতিবাচক প্রভাবের কারণেই রাশিয়া ভারতকে তেলের ওপর আরও ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের পর, ভারত (India) রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় গ্রাহক হয়ে উঠেছে। এদিকে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং শুল্ক সত্ত্বেও, ভারত তার কৌশলগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা সম্পূর্ণ বৈধ: জানিয়ে রাখি যে, আমেরিকা ভারতের (India) ওপর সস্তা দামে রাশিয়ান তেল কিনে, পরিশোধন করে তা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ করেছে। যার ফলে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতিকে সমর্থন করছে বলেও দাবি করেছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পিটার নাভারো এটিকে যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। যার জবাবে, ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা সম্পূর্ণ বৈধ এবং এর ওপর কোনও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরী জানিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যার কারণে অনেক দেশের অর্থনীতিও নিরাপদে ছিল।
আরও পড়ুন: একটি ফোন কল… IPL থেকে অবসর নেওয়ার পরেই ঘটল চমক, এই দেশ থেকে “অফার” পেলেন অশ্বিন
ভারত-চিন-রাশিয়া সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে: উল্লেখ্য যে, অগাস্টের শেষের দিকে ভারত (India) রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয়ের পরিমাণ বাড়িয়েছে। পোর্ট এজেন্টদের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে যে, গত ২৭ অগাস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে ১১.৪ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কিনেছে। যার মধ্যে আমেরিকা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা জাহাজেরও তেল রয়েছে। এই তেল এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে স্থানান্তরিত হয়ে ভারতে আনা হত। উল্লেখ্য যে, রাশিয়ার পশ্চিম বন্দর থেকে উৎপন্ন ইউরাল গ্রেড তেল ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, চিন রাশিয়ার বৃহত্তম তেল গ্রাহক। ভারত ও চিন SCO মঞ্চে তাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন: “জীবনে এমন দিনের জন্য…”, বেঙ্গালুরুতে পদপিষ্টের ঘটনায় এই প্রথম সামনে এল বিরাট কোহলির প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ভারতের জন্য কেন লাভবান: জানিয়ে রাখি যে, ইউরাল রাশিয়ার একটি প্রধান অপরিশোধিত তেল ব্র্যান্ড। যা দেশের পশ্চিম বন্দরগুলি থেকে সারা বিশ্বে পাঠানো হয়। চিন এই তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। যারা পাইপলাইন এবং ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। একইসঙ্গে ভারতও (India) এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে এবং রাশিয়া থেকে ক্রমাগত সস্তা অপরিশোধিত তেল কিনছে। মূলত, আমেরিকার তুলনায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দান ভারতের জন্য প্রতি ব্যারেল প্রায় ৫ থেকে ৭ ডলার সস্তা। এটি ভারতীয় শোধনাগারগুলির খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। যা দেশের জ্বালানি চাহিদা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য প্রত্যক্ষভাবে উপকারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই কারণে, আমেরিকান চাপ উপেক্ষা করে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্বার্থের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করা হচ্ছে।