বাংলা হান্ট ডেস্ক: পশ্চিমী দেশগুলি যখন ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়ার ওপর তাদের নিষেধাজ্ঞা আরও কড়া করছে, ঠিক সেই আবহেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারত দিন দিন তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দেশের তেল সংস্থাগুলিকে বিপুল পরিমাণে সস্তায় রাশিয়ান তেল কিনতে বলেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল শিল্পের সাথে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে সরকারি কর্মকর্তারা ভারতীয় তেল সংস্থাগুলিকে রাশিয়ান তেল কিনতে এবং ওই তেলে ছাড়ের সুবিধা নিতে উৎসাহিত করেছেন। এই প্রসঙ্গে একজন কর্মকর্তার মতে, ইতিমধ্যেই সরকার পরিচালনাধীন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন সরবরাহ বাড়ানোর জন্য রাশিয়ান জ্বালানির জায়ান্ট সংস্থা রোসনেফ্ট অয়েলের সাথে বেশ কয়েকটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে।
তবে, ভারত সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার অবশ্য এই সংস্থাগুলিকে রাশিয়ান তেল কেনার জন্য কোনো অবশ্যম্ভাবী নির্দেশ দিচ্ছেনা। তিনি আরও বলেন যে, রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল বর্তমানে নিষেধাজ্ঞার অধীনে নেই। বরং, বহু দেশ এই তেল কিনে নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল। এমনকি, ইউরোপের প্রায় সব দেশই রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ইউক্রেনের ওপর হামলার কারণে এই দেশগুলি পর্যায়ক্রমে তেল ও গ্যাস ক্রয় করা কমিয়ে দিয়েছে। এতে রাশিয়ার অনেক ক্ষতিও হয়েছে।
কিন্তু ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমান রেকর্ড হারে বাড়িয়েছে। এমতাবস্থায়, ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে এই হারে তেল ক্রয় বাড়াতে থাকে, তাহলে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কম পরিলক্ষিত হবে। শুধু তাই নয়, ভারতের পাশাপাশি চিন ও তুরস্কও রাশিয়ান তেলের প্রধান ক্রেতা হিসেবে নিজেদের স্থান স্পষ্ট করছে। আর এতে লাভ হচ্ছে রাশিয়ারই। যদিও, সামগ্রিকভাবে এই যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি কমেছে।
ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার পরিমান ২৫ গুণেরও বেশি বাড়িয়েছে:
Kpler-এর তথ্য অনুসারে জানা গিয়েছে যে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার পরিমান ২৫ গুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ভারত একদিনে ৩০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ক্রয় করত, জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ১০ লক্ষ ব্যারেলে।
পাশাপাশি, ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এই পরিমান তেল ক্রয় ইউরোপের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল এবং অপরিশোধিত পণ্য আমদানির এক চতুর্থাংশেরও বেশি।
ভারত তার ব্যবসায়িক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়:
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দাম তীব্রভাবে কমেছে। এমনকি, ইউরাল নামে পরিচিত রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের চাহিদা অত্যন্ত বেশি ছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর থেকে এটি ৩৭ ডলারের ব্রেন্ট বেঞ্চমার্কের নিচে নেমে গেছে। যদিও, বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন এর দাম আবার বাড়ছে। অপরদিকে, ভারত রাশিয়ান তেল ছাড়ের সাথে কিনে অনেক লাভবান হয়েছে। এমনিতেই বিশ্বজুড়ে তেলের বাড়তে থাকা দামের কারণে তার আঁচ এসে পড়েছে ভারতেও। যদিও, রাশিয়ার থেকে তেল আমদানির জেরে অনেকটাই সুবিধা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করেছিল। এমনকি ইরান-মার্কিন উত্তেজনার সময়ও ভারত ইরান থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছিল। এমতাবস্থায়, রাশিয়ান তেলের উপর পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতীয় সংস্থাগুলি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয় বাড়াচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল কেনার নতুন উপায় খুঁজছে।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তৈলবাহী জাহাজের বীমার উপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে। যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এমতাবস্থায়, রাশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান তেলের বাণিজ্য যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য ভারত ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সমাধান খুঁজতে শুরু করেছে।