বাংলাহান্ট ডেস্ক : বর্তমানে অধিবেশন চলছে রাজ্য বিধানসভায়। সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রী নবান্নের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন বিধানসভায় তার কক্ষে। সেই বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে নজিরবিহীন ভাবে বচসায় জড়ালেন শাসক দলের দুই মন্ত্রী। পর্যটন ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo) ও কারিগরি শিক্ষা এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন (Indranil Sen) বিধানসভায় আজ জড়িয়ে পড়েন বাকবিতণ্ডায়।
ইন্দ্রনীল সেনের দিকে সরাসরি অভিযোগ করে বাবুল বলেন, ইন্দ্রনীল বাধা সৃষ্টি করছেন পর্যটন দপ্তরের কাজে। পাল্টা ইন্দ্রনীল বলেছেন যদি বাবুলের কোনও বক্তব্য থাকে সেটি মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে। বিধানসভায় আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষ হয় বিকেল চারটে পনেরো নাগাদ। বৈঠক শেষে দেখা যায় বাবুল ও ইন্দ্রনীল মুখ্যমন্ত্রীর ঘর থেকে বেরিয়ে একই সাথে হাঁটছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে চলছে বাকবিতণ্ডা।
বাবুলকে বলতে শোনা যায়,”আমার দপ্তরের কাজ তুমি কেন আটকাচ্ছো?” বাবুলকে পাল্টা ইন্দ্রনীল বলেন, “তোর যা বলার দিদিকে গিয়ে বল।” ইন্দ্রনীল সেনের থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট বাবুল সুপ্রিয়। সেক্ষেত্রে বাবুলকে ইন্দ্রনীল ‘তুই’ করেই ডাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে মূল বক্তব্য হল এই দুই মন্ত্রীর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। ইন্দ্রনীলকে জবাব দিয়ে বাবুল এরপর বলেন, ” “হ্যাঁ, সে আমি বলেছি তো। দরকার হলে আবার বলব। তুমি এভাবে আমার কাজ আটকাতে পারো না।”
আরোও পড়ুন : বাংলা সিনেমার প্রথম কমেডি কিং! টলিউডে জোটেনি যোগ্য সম্মান, শেষ বয়সে ভানুর পরিণতি জানলে কাঁদবেন
এর জবাবে ইন্দ্রনীল বাবুলকে বলেন, “কেন আটকাতে যাব। বললাম তো, কিছু বলার থাকলে দিদিকে বল।” এরপর বাবুল রাগী গলায় বলেন তিনি করে দেখাবেন যা করার। কিন্তু রাজ্যের এই দুই মন্ত্রীর ঝামেলা ঠিক কী নিয়ে? এই প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য আমাদের একটু পিছনের দিকে তাকাতে হবে। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর বাবুল সুপ্রিয় বিজেপির সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে যোগদান করেন তৃণমূলে।
এরপর বাবুল সুপ্রিয় বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন পদে জয়ী হয়ে আসেন রাজ্য মন্ত্রিসভায়। সে সময় মুখ্যমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের পর্যটন দপ্তর তুলে দেন বাবুলের হাতে। সেই থেকেই দুই গায়ক তথা মন্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় ঠান্ডা যুদ্ধ। একটি সূত্র দাবি করেছে, ইন্দ্রনীল সেনের পর্যটন দপ্তরের উপর বিশেষ মায়া ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে পর্যটন দপ্তর বাবুলের হাতে তুলে দেওয়াকে তিনি ভালোভাবে নেননি।
আরোও পড়ুন : ইলিশের দামে বড়সড় পতন! সস্তায় রূপোলি শস্য মিলতেই চওড়া হচ্ছে মধ্যবিত্তের হাসি
একাধিকবার বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনায় পর্যটন দপ্তরে বাবুলের কাজকর্ম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ইন্দ্রনীল। এমনকি পর্যটন দপ্তরের কাজ নিয়ে ইন্দ্রনীল নালিশও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। অন্যদিকে বাবুলও ইন্দ্রনীলের সময় পর্যটন দপ্তরে ঘরোয়া অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মুখ্যমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান পদে বসান।
এরপর থেকেই পর্যটন দপ্তরের কাজ নিয়ে বিবাদ তৈরি হতে থাকে দুই মন্ত্রীর মধ্যে। তৃণমূলের একটি সূত্র দাবি করছে খুব শীঘ্রই এই ব্যাপারটি মীমাংসা হতে পারে। বাবুলকে তৃণমূলে আনার পিছনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন অভিষেক। এক্ষেত্রে দুই মন্ত্রীর বিবাদ তার কানে গেলে একটা মীমাংসা হতে পারে বলে আশা তৃণমূলের। তবে, ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।