কথায় কথায় শুল্কের ভয় দেখানো আমেরিকাই গলা পর্যন্ত ডুবে ঋণে! সতর্ক করল IMF

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: আমেরিকাকে সতর্কবার্তা আইএমএফ (International Monetary Fund) এর তরফ থেকে। ভারতীয় দর্শনের আলোচনাতে সুখের সংজ্ঞা এক নয়। মহাভারতের যক্ষপ্রশ্নে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, সত্যিকারের সুখী সেই ব্যক্তি, যার কোনও ঋণ নেই, যিনি প্রবাসে থাকেন না এবং যিনি দিনের শেষে ঘরে ফিরে সাদাসিধে শাকভাত খেয়ে নিশ্চিন্তে থাকেন। অন্যদিকে, ভারতীয় দর্শনেই ঋষি চার্বাক বলেছেন, ধার করে হলেও ঘি খাও, অর্থাৎ জীবনে আনন্দটাই মুখ্য। আধুনিক দুনিয়ায় দেখা যাচ্ছে, অনেকেই চার্বাকের পথেই হেঁটেছেন। শখ, সুবিধা, আর আরামের জন্য ইএমআই-র ফাঁদে ঢুকে পড়ছেন তারা।

গলা অব্দি ঋণে ডুবে আমেরিকা, সতর্কবার্তা আইএমএফ (International Monetary Fund)- এর

এই ধার—এই ঋণের নেশা যেন এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের শিরায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের পরিমাণ এখন দেশের জিডিপির ১২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ সরকার প্রতি ১০০ ডলার আয় করলে, তাদের ধার ১২৫ ডলার! আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund) এ বিষয়ে প্রবলভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে আমেরিকার অবস্থা হবে ইতালি ও গ্রিসের থেকেও খারাপ।

আরও পড়ুন: X-এও মোদী ম্যাজিক! টেক্কা দিলেন ট্রাম্পকে, মোস্ট ফলোড পার্সনের তালিকায় দাপট দেখালেন প্রধানমন্ত্রী

২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর ইউরোপে পর্তুগাল, ইতালি, গ্রিস ও স্পেনকে (PIGS) অর্থনৈতিক দুর্বল দেশের তকমা দেওয়া হয়েছিল। এখন ইতালির ডেট-জিডিপি রেশিও ১৩৭ শতাংশ এবং গ্রিসের ১৩০ শতাংশ। IMF (International Monetary Fund)-এর অনুমান, ২০৩০ সালে আমেরিকার এই অনুপাত ১৪৩ শতাংশে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ ধার করে চলায় ধনী দেশের তালিকায় শীর্ষে থাকা আমেরিকা পিছিয়ে পড়তে পারে সেইসব দেশের সামনে, যাদের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে একসময় সারা বিশ্ব ব্যঙ্গ করত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধনী দেশ ও ধনী মানুষ সহজেই ধার পায়; তাদের আর্থিক গুরুত্ব, ট্র্যাক রেকর্ড ও বাজারের বিশ্বাস থাকায়। আমেরিকা পৃথিবীর অর্থনৈতিক নেতৃত্ব ধরে রেখেছে বহু দশক ধরে। মার্কিন সরকারি বন্ড এখনও বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত বিনিয়োগের জায়গা হিসেবে বিবেচিত। ফলে ধার বাড়লেও বাজারে শঙ্কা এতটা স্পষ্ট নয়। তুলনায় ভারতের ডেট-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৮২.৫ শতাংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন বন্ডের রেটিং এখনও বেশি (International Monetary Fund)।

International Monetary Fund warns America.

আরও পড়ুন:সাতদিন ধরে বাতিল ট্রেন, বদলাচ্ছে টাইম টেবিল, হাওড়া ডিভিশনে বড় ঝামেলার সম্মুখীন যাত্রীরা

তবে সমস্যা শুরু হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি থেকে। ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত করছাড় নীতি ধনীদের রেয়াত দিয়েছে, ফলে সরকারের আয় কমে গেছে। একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বেড়েই চলেছে। কোষাগার ফাঁকা হতে থাকায় সরকার আরও বেশি বন্ড ইস্যুর পথে এগিয়েছে। এতে ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের মতবিরোধও তীব্র হয়েছে (International Monetary Fund)।

IMF (International Monetary Fund)-এর সতর্কবার্তা স্পষ্ট—এভাবে ঋণ বাড়তে থাকলে আমেরিকার অর্থনীতি একদিন ধসে পড়তে পারে। আর মার্কিন অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলে তার ঢেউয়ে কাঁপবে পুরো বিশ্ববাজার। তাই প্রশ্ন উঠছে—যুগ কি চার্বাকের? ধার করে সুখে থাকার দর্শন কি একদিন সভ্যতাকেই বিপদের মুখে দাঁড় করাবে? বিশ্বে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে—অপরিণামদর্শী ঋণ-দর্শনের শেষ কোথায়?