বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তৃণমূলের ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত ছিল হুগলি (Hooghly)। উনিশের লোকসভা ভোটে যখন লকেট চট্টোপাধ্যায়কে (Locket Chatterjee) প্রার্থী করেছিল বিজেপি, তখন অনেকেই ভাবতে পারেননি দাপুটে নেত্রী রত্না দে নাগকে তিনি হারিয়ে দেবেন। কিন্তু সেই ‘উলটপুরাণের’ সাক্ষী ছিল বাংলা। এরপর অবশ্য একুশের বিধানসভা ভোটে চুঁচুড়া থেকে পরাজিত হন বিজেপি (BJP) নেত্রী। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও হুগলিতে পদ্ম ফোটাতে পারেননি। এবার শোনা যাচ্ছে, হুগলি ছাড়তে চাইছেন প্রাক্তন সাংসদ লকেট।
লকেট চট্টোপাধ্যায় (Locket Chatterjee) নিজে কী বলছেন?
বিজেপি সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, লোকসভা হোক বা বিধানসভা, কোনও ভোটেই আর হুগলি থেকে দাঁড়াতে চান না লকেট চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের জন্য নয়, বরং গেরুয়া শিবিরেরই একাংশ এর জন্য দায়ী বলে খবর।
কয়েকদিন আগে পূর্ব বর্ধমানের তালিতে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সমাবেশ ছিল। রাজ্য বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা সিংহভাগ রাজনীতিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেখানে দেখা যায়নি লকেটকে (Locket Chatterjee)। জানা যাচ্ছে, এই সমাবেশে শুধু মধ্যবঙ্গের স্বয়ংসেবকদেরই ডাকা হয়েছিল। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেটের রাজনৈতিক পৃষ্ঠভূমি মধ্যবঙ্গ। তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না হুগলির প্রাক্তন সাংসদ।
আরও পড়ুনঃ সাধারণ মানুষকে ফেলে রাখা হচ্ছে ভগবানের ভরসায়? নয়াদিল্লিতে পদপিষ্ট কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে বিজেপি নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। ভাইরাল জ্বরে দিন তিনেক বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনি। আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম জ্বরের কারণে যেতে পারছি না’। লকেট একথা বললেও মাথাচাড়া দিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্ন। শুধুমাত্র কি শারীরিক অসুস্থতার কারণে যাননি নাকি হুগলি তথা মধ্যবঙ্গই তাঁর রাজনৈতিক পৃষ্ঠভূমি, এমন কোনও পরিচয় আর চাইছেন না তিনি?
বিজেপি সূত্র উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উনিশের লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election) সময় হুগলির অনেক নেতাই ভাবতে পারেননি ওই কেন্দ্রে জয়ী হওয়া সম্ভব। সেই কারণে লকেটকে দাঁড় করানোয় তাঁরা চিন্তায় ছিলেন না। বাইরের জেলার কেউ দাঁড়িয়ে তাঁদের ‘নেত্রী’ হয়ে যাবেন, এমন আশঙ্কা অনেকের মনেই ছিল না। তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় বাজিমাত করেছেন লকেট। এরপরেই অনেক নেতার মনে সেই আশঙ্কা তৈরি হয় বলে খবর।
জানা যাচ্ছে, দলের অন্দরে শুরু হয় অসহযোগিতা এবং প্রতিরোধের রাজনীতি। দলীয় কোন্দলের জেরেই লকেট (Locket Chatterjee) হুগলি ছাড়ছেন এই বিষয়ে বিজেপি নেতারা বিশেষ প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছেন না। ‘কোনও কোন্দল নেই’ কিংবা ‘লকেট চট্টোপাধ্যায় হুগলিতেই থাকছেন, কোথাও যাচ্ছেন না’, এমন দাবি কারোর মুখে শোনা যাচ্ছে না বলে খবর।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্মীলাভ রাজ্যের! ৭৪০০ কোটি টাকা দিল কেন্দ্র! লাভ হবে আমজনতার?
এই বিষয়ে বিজেপি নেত্রীর বক্তব্য, ‘আমায় শুধু হুগলিতেই রাজনীতি করতে হবে বা শুধু হুগলি জেলা থেকেই ভোটে লড়তে হবে, এমনটা কেন ভাবা হচ্ছে? আমি তো রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। আমি তো গোটা রাজ্যেই দলের জন্য কাজ করতে পারি। ভোটে লড়তে হলে হুগলিতেই লড়তে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা তো নেই’।
হুগলি ছাড়তে চাইছেন, সরাসরি এমন কোনও মন্তব্য না করলেও লকেট (Locket Chatterjee) বলেন, ‘আমি হুগলির সাংসদ ছিলাম ঠিকই। কিন্তু বাইরে থেকেই তো সেখানে লড়তে গিয়েছিলাম। সেখানকার মানুষ আমায় ভোট দিয়ে জয়ী করেছিলেন। তাই পাঁচ বছর তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু দল আমায় যে অন্য জেলা থেকে হুগলিতে পাঠিয়েছিল, সেকথাও তো ঠিক’।