বাংলাহান্ট ডেস্ক : ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই।’ এই স্লোগানটার মধ্যে একটা আলাদা রকমের উত্তেজনা রয়েছে। এবং এই স্লোগানের কী মাহাত্ম তা প্রত্যেক পশ্চিমবঙ্গবাসীই জানেন। এই স্লোগানটা শুনলেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে একটা ছবি। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর প্রাপ্য অধিকারের জন্য কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্ন আঁকা লাল পতাকা নিয়ে আন্দোলন করছে বামপন্থীরা। কিন্তু এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে যেখানে গোটা বিশ্বেই বামপন্থাকে একরকম দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয় সেখানে বাংলার বামেরা কোন লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে বামনেতা ‘কমরেড’ সূর্যকান্ত মিশ্রর ছবি দিয়ে তার পাশে লেখা হয় ভারতে নাকি হিন্দু-উচ্চবর্ণ-পুরুষ’ ছাড়া আর কারোরই আধিপত্য নেই। তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। এই ছবিটি ”CPIM West Bengal” নামের ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়। এই ছবি আপলোড করে বামপন্থীরা সমাজে বিভেদকেই কি প্রধান্য দিচ্ছেন না? প্রশ্ন উঠছে একাধিক মহলে।
ঠিক কী লেখা হয় ওই পোস্টে? সূর্যকান্ত মিশ্রর ছবি দেওয়া ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘আমাদের সমাজে বিপদ হিসাবে তিনটি শব্দ আধিপত্য করছে। হিন্দু, উচ্চবর্ণ এবং পুরুষ। ভারতীয় সমাজের অংশ হিসাবে আমরা সব ক্ষেত্রে এই বিপদ থেকে মুক্ত তা বলা যাবে না। আমাদের এই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে।’ এবার একটু দেখে নেওয়া যাক ‘আণুবীক্ষণিক’ বামেদের এই দাবির সারবত্তা কতটা?
১) সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির নাম দ্রৌপদী মুর্মু। এই একটা নামই যথেষ্ট বামেদের এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য। প্রথমত, দ্রৌপদী মুর্মু একজন মহিলা। দ্বিতীয়ত, তিনি ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। এবং তফসিলি উপজাতির মানুষ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দৌপদী মুর্মু হারিয়েছেন যশবন্ত সিনহাকে। ইনি একজন পুরুষ এবং উচ্চবর্ণের হিন্দু। আরও বিশেষ ভাবে বললে যশবন্ত সিনহা উচ্চবর্ণের ‘কায়স্থ হিন্দু’।
২) এবার আসা যাক ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কথায়। নরেন্দ্র মোদি পুরুষ এবং হিন্দু হলেও উচ্চবর্ণের মোটেই নন। আদতে মোদি হলেন তেলি সম্প্রদায় ভুক্ত। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে এই ‘তেলি’ সম্প্রদায়কে পিছিয়ে পড়া জনজাতি বা ‘ওবিসি’ তকমা দেওয়া হয়েছে। তাহলে যে দেশের প্রধানমন্ত্রীই নিম্নবর্ণের মানুষ সেখানে উচ্চবর্ণের আধিপত্য কিভাবে বিস্তার হলো তা জানতে হয়তো আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ‘যন্তর মন্তরে’ সূর্যবাবুদের কাছে কিছু দিন ক্লাস করতে হবে সকলকে।
৩) ‘কমরেড’ সূর্যকান্ত মিশ্র যে রাজ্যে দাঁড়িয়ে কথাটি বলছেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই একজন মহিলা। শুধু তাই নয়, বাংলার রাজধানী মহানগর কলকাতার মহানাগরিক বা মেয়র ফিরহাদ হাকিম একজন মুসলিম। তাহলে, পুরুষ এবং হিন্দু আধিপত্য এই বাংলার বুকেই বা কোথায় খুঁজে পেলেন তা বোধহয় একমাত্র ‘চলছে না চলবে না গ্যাং’-ই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে।
৪) পরিশেষে আসা যাক বামেদের কথায়। বাংলার প্রথম অকংগ্রেসি তথা বাম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। এবং তাঁর উত্তরসূরি ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্যোতি বসু হিন্দু কায়স্থ। এবং বুদ্ধবাবু ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ। দুজনেই উচ্চবর্ণের হিন্দু। এখন প্রশ্ন হলো উচ্চবর্ণ-হিন্দু-পুরুষদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে যে ‘জেহাদ’ বামপন্থীরা শুরু করতে চাইছেন তা আগে তাঁদের দলেই শুরু করা দরকার নয় কি? কথাতেই তো আছে “Charity begins at home”.