বাংলা হান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি ভারতের (India) বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর (S Jaishankar) এবং জার্মান (German) বিদেশমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল (Johann Wadephul) বৈঠককে ঘিরে ভারত-ইউরোপ (Europe) সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আলোচনা শুরু হয়েছে। জার্মান মন্ত্রী ওয়াদেফুল বর্তমানে দু’দিনের ভারত সফরে রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বেঙ্গালুরুতে ছিলেন এবং এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ভারত ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। বৈঠকে জয়শঙ্কর স্পষ্টভাবে জানান, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে চায় এবং এই ক্ষেত্রে জার্মানির সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নে বার্লিনের আস্থা ও সমর্থন অপরিহার্য।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক (India)
বর্তমানে ভারত (India) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বার্ষিক প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আরও সম্প্রসারিত করতে দীর্ঘদিন ধরে এফটিএ নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু নানা জটিলতা ও মতবিরোধের কারণে চুক্তি এখনও সম্পন্ন হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবি, ভারতকে বিদেশি গাড়ি ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপর শুল্ক কমাতে হবে। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ক্ষেত্রে কঠোর পরিবেশ ও শ্রমসংক্রান্ত মানদণ্ড কার্যকর করার পক্ষপাতী। অন্যদিকে ভারতীয় সরকার বলছে, এই ধরনের শর্ত দেশীয় কৃষক ও শিল্পখাতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ভারতের লক্ষ্য স্থানীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দেওয়া এবং এমন নিয়ম না মানা, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।
আরও পড়ুন:- পাত্তাই পাচ্ছেন না ট্রাম্প! ভারতের অর্থনীতিতে ভরসা রেখে বড় ঘোষণা করল আমেরিকার বৃহত্তম ব্যাঙ্ক
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিরোধ মেটানোর প্রক্রিয়া নিয়ে ভারত (India) এবং ইউরোপের মধ্যে মত পার্থক্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় আন্তর্জাতিক আদালত বা সংস্থা চূড়ান্ত রায় দিক। কিন্তু ভারত জোর দিচ্ছে যে কোনও আইনগত নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধ মীমাংসার ক্ষমতা তার নিজস্ব হাতে থাকা উচিত। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
ইকোনমিক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, ভারত (India) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বর্তমানে ব্রাসেলসে বসে চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চালাচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই এফটিএ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দুই পক্ষই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই চুক্তি সফলভাবে স্বাক্ষরিত হয় তবে ভারতের (India) জন্য ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ আরও সহজ হবে। একইসঙ্গে ইউরোপের জন্যও ভারতের বিশাল ভোক্তা বাজার খুলে যাবে, যা দুই পক্ষের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে নতুন মাত্রা দেবে। তবে কৃষি, শিল্প, পরিবেশ ও শ্রম আইন সংক্রান্ত মতপার্থক্য সমাধান করাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জয়শঙ্কর-ওয়াদেফুল বৈঠকে সেই সমস্যাগুলো মেটানোর পথ খোঁজা হয়েছে।
আরও পড়ুন:-আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফের “অপমান”! পাক প্রধানমন্ত্রীর কাণ্ডকারখানায় হেসে ফেললেন পুতিনও
সব শেষে বলা যায়, ভারত (India) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। জার্মানির সহযোগিতা পেলে এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চুক্তি স্বাক্ষর অনেকটাই সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।