বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বর্তমানে ফের উঠে এসেছে ইজরায়েল প্যালেস্টাইন যুদ্ধ। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার দেশ হিসেবে পরিচিত হওয়ার পর থেকেই বারবার লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই যেতে হয়েছে ইজরায়েলকে। প্রথমে সমস্ত আরব দেশ এবং পরে প্যালেস্টাইনের সঙ্গে যুদ্ধের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে তাদের।
আল-আকসা মসজিদে ইজরায়েলের গুলিবর্ষণকে কেন্দ্র করে এবারও প্যালেস্টাইনের জঙ্গী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে তারা। এর পরেই ইজরায়েলের উপর রকেট বর্ষণ শুরু করে হামাস। পাল্টা প্রশ্ন উত্তর দেয় ইজরায়েলও। প্যালেস্টাইনের মতে, নীতিবিরুদ্ধ ভাবে তাদের দেশে উপনিবেশ গড়ে তুলতে চাইছে ইজরায়েল। অন্যদিকে ইজরায়েল মনে করে হামাসের মত জঙ্গী সংগঠন যেভাবে বারবার আক্রমণ চালাচ্ছে তা অনৈতিক। এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১৮১ জন প্যালেস্তানীর, যাদের মধ্যে ৫২ জন শিশু,অন্যদিকে ইজরায়েলেও দুজন শিশুসহ মারা গিয়েছে প্রায় দশজন।
এমতাবস্থায় দুই ভাগে ভাগ হয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। কেউ কেউ যেমন সরাসরি সমর্থন করেছেন ইজরায়েলকে, তেমনি আবার প্যালেস্টাইনের উপর আক্রমণের জন্য ইজরায়েলকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেশ কিছু দেশ। আসুন দেখে নেওয়া যাক, শেষ কয়েক দিন ব্যাপী লাগাতার এই যুদ্ধে কাকে সমর্থন করছে কোন দেশ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইজরায়েল নাকি প্যালেস্টাইন কাকে সমর্থন জানালো ভারত?
ইজরায়েলের সমর্থনে কোন কোন দেশঃ
হোয়াইট হাউসের এক সাংবাদিক বৈঠকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বিডেন আগেই জানিয়েছিলেন, “ইজরায়েলের অধিকার আছে প্রতুত্তর দেওয়ার, যখন তাদের দেশের দিকে হাজার হাজার রকেট ছুটে আসছে। ”
ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে জার্মানিও। জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন সেবার্ট বলেন, “হিংসা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ইজরায়েলের অধিকার রয়েছে, এই আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করার ও আত্মরক্ষার স্বার্থে প্রতুত্তর দেওয়ার।”
আমেরিকা এবং জার্মানি ছাড়াও এই যুদ্ধে সরাসরি ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩টি তাবড় তাবড় দেশ। তালিকায় রয়েছে, আলবেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, কলম্বিয়া, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, স্লোভেনিয়া এবং ইউক্রেনের মতো একাধিক বড়নাম। প্রত্যেকেই প্যালেস্টাইনের জঙ্গি আক্রমণকে সরাসরি নিন্দা করে ইসরায়েলের পক্ষে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। গত ১৬ মে নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পাশে দাঁড়ানো ২৫ টি দেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
প্যালেস্টাইনের পক্ষে কোন কোন দেশঃ
হামাসের মতে তাদের যুদ্ধ ঔপনিবেশিকতাবাদের বিরুদ্ধে। আর এই যুদ্ধে বরাবরের মতই তারা পাশে পেয়েছে ৫৭ টি ইসলাম প্রধান আরবিক দেশকে। এই সংঘর্ষের মধ্যেই রবিবার ৫৭ টি ইসলামিক দেশের সম্মিলিত সংগঠন ওআইসি জরুরী বৈঠক ডাকে। এই বৈঠকে ইজরায়েলের শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে তুরস্ক, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বাহারিন, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, ইরান, ইরাক কুয়েত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মালি, ওমান, লিবিয়া মালয়েশিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ গুলি।
আফগানিস্তানে বিদেশ মন্ত্রী বলেন, “প্যালেস্তাইনিদের সঙ্গে আজ যা হচ্ছে সেটা ইসলামিক দেশগুলোর কাছে ঘা-এর মতন।”
অন্যদিকে প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্কও। দেশের বিদেশ মন্ত্রী বলেন, “ইজরায়েলকে যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, ওঁরা তাতে কর্ণপাত করেনি। গাজা পট্টি আর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে যা হচ্ছে তাঁর জন্য একমাত্র ইজরায়েল দায়ী।”
অন্যদিকে পাকিস্তানের তরফেও সমর্থন জানানো হয়েছে প্যালেস্টাইনকেই। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অফিস তরফে জানানো বিবৃতি অনুযায়ী, “প্যালেস্টাইনের জনগণের অধিকার এবং তাদের বৈধ সংগ্রামের পক্ষে পাকিস্তানের অবিচল সমর্থন রয়েছে।”
এই যুদ্ধে ভারত কার পক্ষে ?
প্রথম থেকেই প্যালেস্টাইন এবং ইজরায়েলের যুদ্ধ বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। একাধিক টুইটে এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের ভারতীয় প্রতিনিধি টি এস তিরুমূর্থি। তবে এই প্রথমবার এ বিষয়ে নিজেদের স্পষ্ট মতামত উত্থাপন করলো ভারত। রাষ্ট্র সংঘ আয়োজিত বিতর্ক সভার ভিডিও বিবৃতিতে তিরুমূর্থি জানান, “পবিত্র রমজানের দিনগুলিতে জেরুজালেমের হারাম উল শরীফ এবং টেম্পল মাউন্টের হিংসার ঘটনা তথা পূর্ব জেরুজালেমে শেখ জাহরা এবং সিলওয়ান অঞ্চলের ঘটনায় আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ আগেই ব্যক্ত করেছি। একইসঙ্গে আমরা ওয়েস্ট ব্যাংক এবং গাজার ঘটনা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
এক সপ্তাহ আগে পূর্ব জেরুজালেমে যে হিংসার শুরু হয় তা এখন প্রায় হাতের বাইরে চলে যেতে বসেছে। গাজার তরফে যেভাবে রকেট বর্ষণ করা হয়েছে তা নিন্দনীয় এবং একইসঙ্গে ইজরায়েল যেভাবে প্রত্যুত্তর দিয়েছে তাতেও মৃত্যু হয়েছে বহু সাধারণ মানুষ শিশু এবং মহিলার। এই রকেট বর্ষণে ভারত বর্ষও তার একজন প্রবাসী নাগরিককে হারিয়েছে যিনি ইজরায়েলে বসবাস করতেন।… আমরা প্রতিটি হিংসা ও উত্তেজনার ঘটনার চরম বিরোধিতা করি। এই মুহূর্তে দুই দেশেরই প্রয়োজন হিংসার পথ থেকে সরে আসা।”
একইসঙ্গে ভারতের পক্ষে তিনি জানান, “আমরা বিশ্বাস করি যে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে আলোচনা আবার শুরু করার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত।”
সে ক্ষেত্রে তিরুমূর্থি বলেন,ভারত সর্বদা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে। ভারত কোন হিংসাকে সমর্থন করে না এবং ভারত চায় আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সূত্র খুঁজে বের করা উচিত এই দীর্ঘ সমস্যার।