এক ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, যিনি না থাকলেও স্বপ্নই থেকে যেত WiFi, 5G পরিষেবা

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ “ভারতের কোন বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি হে আর্য আচার্য জগদীশ।”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিজ্ঞান সাধনায় ব্রতী হয়ে যারা ভারত তথা বিশ্বকে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানবজাতিকে করে তুলেছেন ব্রহ্মান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব, তাঁদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু (Jagdish Chandra Bose)। যিনি নিজের জ্ঞানের আলোয় ভারত তথা বিশ্বকে আলোকিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। গাছের যে প্রাণ আছে, তা কিন্তু সর্বপ্রথম তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন।

760338 jagadish chandra bose

Wi-Fi-এর সূত্রপাত
বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে মানুষের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী Wi-Fi। শুনতে অবাক লাগলেও, ১৮৯৫ সালে এই বহুল প্রচলিত Wi-Fi-এর সূত্রপাত তার হাত ধরেই হয়েছিল।

১৮৯৫ সালে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার করেতে করতে ৭৫ ফুট দূরে থাকা একটি বেল বাজানোর উদ্দ্যেশ্যে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ (Electro magnetic wave) ব্যবহার করেন। কিন্তু এই ঘটনার প্রায় ২ বছর পরে মার্কোনি সাহেব ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও Bose’s mercury coherer’ ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি রেডিও কমিউনিকেশন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে মার্কোনি সাহেব এই রেডিও ওয়েভের মাধ্যেমে নিজের খ্যাতি তথা বাণিজ্যিক প্রসার ঘটালেও জগদীশ চন্দ্র বসু এটির আবিষ্কারক হিসাবে কোনরূপ পেটেন্ট গ্রহণ করেননি।

wifipixabay 100697370 large

বিশ্বের নানান বিজ্ঞানী যখন প্রায় ৬০ মিলিমিটার রেডিও ওয়েভের সাহায্যে কোন গবেষণা করতে অক্ষম ছিলেন, সেসময়ে তিনি ভারতীয় বাঙালী বিজ্ঞানী যিনি ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওয়েভ গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। শুধুমাত্র এটি নয়, ৫ মিলিমিটার ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ওয়েভ তিনি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা সেসময়ে কোন পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব ছিল না।

Jagadish Chandra Bose 1926 resize md

পাশাপাশি তিনি ১৯ শতকে দাঁড়িয়েও, যে ওয়েভের সাহায্যে গবেষণা করতেন, তা বর্তমান যুগের 5G টেকনোলজির পরিকাঠামো। তিনি বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন, বর্তমান যুগের মাইক্রোওয়েভ টেকনোলোজিতে (Microwave technology) ব্যবহৃত হয়।

hbgg885555

ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র
পাশাপাশি তার যুগান্তকারি আবিষ্কার হল ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র (Crescograph)। উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ, সর্বপ্রথম এই যন্ত্রের সাহায্যেই পাওয়া যায়। ১৯০১ সালের ১০ ই মে তিনি জানান, উদ্ভিদেরাও মানুষের ন্যায় সমস্তরকম অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল। যেমন, মানুষ তাপ, ঠাণ্ডা, ভালোবাসা, দুঃখ অনুভব করতে পারে, তেমনই গাছও সবকিছুই অনুভব করতে পারে। তবে পার্থ্যক হল, তারা বুঝতে পারলেও, মানুষের ন্যায় প্রকাশ ক্ষমতা করতে অক্ষম। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর সেই ভুল করেননি। ১৯০৪ সালের ২৯ শে মার্চ তিনি উদ্ভিদের প্রাণ আবিষ্কারের পেটেন্ট নিয়েছিলেন।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, একটি গাছকে যদি একটি সুন্দর মিউজিকের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে গাছটির বৃদ্ধিও দ্রুতভাবেই ঘটবে। আবার, উদ্ভিদে কোনপ্রকার বিষ প্রয়োগে, তারাও ব্যথিত হয়ে প্রাণীদের মতই আর্তনাদ করে। বর্তমানে বিজ্ঞানিদের ধারণা অনুযায়ী, গাছেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে সক্ষম। তবে আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু সেইসময়ে দাঁড়িয়েও একথা বলে গিয়েছিলেন।

unnamed 57

মানব প্রজাতির কল্যাণে অনস্বীকার্য
সবশেষে বলা যায় আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুর বিভিন্ন অভূত পূর্ব আবিষ্কার তথা অবদান মানব প্রজাতির কল্যাণে অনস্বীকার্য। তিনি মাত্র ২৪ স্কোয়ার ফুটের একটি ঘরে তার গবেষণার কাজ করতেন। তার আবিষ্কার গুলির জন্য, তিনি কোন পেটেন্ট নিতে চাননি। কারণ, তিনি তার আবিস্কারকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার যোগ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে কোন প্রকার অর্থ উপার্জন করতে চাননি। তার ধারণায়, ‘The true laboratory is the mind, where behind illusion we uncover the laws of truth’। পাশাপাশি, তিনি মানব কল্যানের উদ্যেশ্যে ১৯১৭ সালে বসু বিজ্ঞান মন্দিরও (Bose Institute) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

Smita Hari

সম্পর্কিত খবর