বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভূস্বর্গের (Jammu and Kashmir) সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক যুগান্তকারী উদযাপন হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুলায় “কাশুর রিওয়াজ ২০২৫” উৎসব মহাসমারোহে সম্পন্ন হল। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই উৎসবে তৈরি হয়েছে ২ টি অনবদ্য বিশ্বরেকর্ড। যেগুলি সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন প্রত্যেকে। মূলত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ড্যাগার ডিভিশন এবং বারামুলা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি শিল্পকলা প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও, যুবসমাজের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাদকবিরোধী বার্তার ওপরেও জোর দেওয়া হয়।
কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) সাংস্কৃতিক নবজাগরণ:
তৈরি গিয়েছে ২ টি বিশ্বরেকর্ড:
১. বৃহত্তম লাদিশা পরিবেশনা: মূলত, সংশ্লিষ্ট জেলার ১৬২ টি স্থানে ২০,০০০ শিক্ষার্থী সর্ববৃহৎ লাদিশা পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে। যেটি কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) “কাশুর রিওয়াজ ২০২৫” উৎসবে তৈরি হল ২ টি বিশ্বরেকর্ড শতাব্দী প্রাচীন একটি “মিউজিক্যাল স্টোরিটেলিং ফর্ম” হিসেবে বিবেচিত হয়। লাদিশা একটি ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি শিল্পকলা। যা দূর-দূরান্তের গ্রামের স্থানীয় সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত এবং অবহিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
২. মাস ক্যালিগ্রাফি; লেখার ইভেন্ট: ১৮,৩৫০ জন যুবক-যুবতী সম্মিলিতভাবে ঐতিহ্যবাহী ক্যালিগ্রাফিক পদ্ধতিতে “সারে জাহান সে আছা হিন্দুস্তান হামারা” এই দেশাত্মবোধক পদ্যটি লেখে। যেটি একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চতুর্দশ শতাব্দীতে কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) প্রবর্তিত হয়েছিল ক্যালিগ্রাফি। যেটি একটি সম্মানিত শিল্পকলা। সেটি দীর্ঘকাল ধরে এই অঞ্চলের আধ্যাত্মিক প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
ইতিমধ্যেই এই রেকর্ডগুলি বিচার করেছে “দ্য ইউনিভার্সাল রেকর্ডস ফোরাম” (URF)। যেটি একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম। এই ফোরাম বিশ্ব রেকর্ডগুলি নথিভুক্ত করে এবং যাচাই করে অসামান্য প্রতিভা এবং কৃতিত্ব অর্জনকারীদের স্বীকৃতি দেয়। পাশাপাশি, একটি ISO 9001-2015 সার্টিফায়েড সংস্থা হিসাবে, URF গিনেস রেকর্ডস স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে রেকর্ড যাচাইকরণে সত্যতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে। এছাড়াও, উল্লেখযোগ্য বিষয় হল URF রেকর্ড বই প্রকাশ করার পাশাপাশি রেকর্ড হোল্ডারদের তাঁদের কাহিনি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
কাশুর রিওয়াজ ২০২৫ উৎসব: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, “কাশুর রিওয়াজ ২০২৫” উৎসব হল কাশ্মীরের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উদযাপন। যেখানে ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি শিল্প থেকে শুরু করে সঙ্গীত এবং সাহিত্যের পরিবেশনা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর শ্রী মনোজ সিনহা। যিনি এই ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য তরুণদের অভিনন্দন জানান এবং আয়োজকদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। এছাড়াও, লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেলা প্রশাসন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও অভিনন্দন জানান। তিনি সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের প্রতি রাজ্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের তরুণদের আশা এবং স্বপ্ন কেবল শান্তির পরিবেশেই বিকশিত হতে পারে।”
আরও পড়ুন: “তৃণমূল নাট্য কোম্পানি…বাঙালির মর্যাদা রাখে না”, লোকসভায় শাসকদলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন সৌমিত্র খাঁ
এছাড়াও, তিনি কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর উল্লেখ করেন যে সেনাবাহিনী এবং জেলা প্রশাসন সেখানকার সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। যার ফলে ক্ষমতায়ন ছাড়াও শিক্ষা, দক্ষতা, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি সাম্প্রতিক অপারেশন মহাদেবের কথাও উল্লেখ করেন। যেখানে পহেলগাঁও হামলার ঘটনায় যুক্ত থাকা একাধিক জঙ্গিকে নিকেশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর খুলবে কপাল! ভারতের সবথেকে বড় IPO আনতে চলেছেন মুকেশ আম্বানি
নতুন আশার আলো: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, “কাশুর রিওয়াজ ২০২৫”-এর বিরাট সাফল্য কাশ্মীরে
(Jammu and Kashmir) একটি নতুন সূচনার জন্য আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে। যা সংঘাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার দিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করে এবং শৈল্পিক প্রকাশকে উৎসাহিত করে। এই প্রসঙ্গে যুব নেতা তৌসিফ রায়না যথাযথভাবে বলেছেন, “এটি একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ… এটি কেবল রেকর্ড স্থাপনের বিষয় নয় – এটি পরিচয় পুনরুদ্ধারের বিষয়।” অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে “কাশুর রিওয়াজ ২০২৫” উৎসব ছিল কাশ্মীরের তরুণদের স্থিতিস্থাপকতা এবং সৃজনশীলতার প্রমাণ এবং এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উদযাপন। পাশাপাশি, ওই দু’টি বিশ্বরেকর্ডের প্রসঙ্গ সামনে আসার পরেই সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকেই উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন।