বাংলাহান্ট ডেস্ক: ওডিশার নবরংপুর জেলার ঝারিগাঁও গ্রামের যুবক জিতেন্দ্র মহারাণা আজ সাফল্যের (Success Story) এক অনন্য উদাহরণ। মাত্র ২,০০০ টাকার ক্ষুদ্র বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করা তাঁর উদ্যোগ এখন ৩০ লক্ষ টাকার বার্ষিক টার্নওভার তৈরি করছে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘খুশি অ্যাগ্রো’ (Khushi Agro)। করোনা মহামারির সময় জিতেন্দ্র এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রথমে তাঁর লক্ষ্য ছিল কেবল নিজের রান্নাঘরের বাগানের জন্য জৈব সার তৈরি করা। কিন্তু শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে এই ছোট ধারণাটিই এক বড় ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত হতে পারে।
জিতেন্দ্রর অসামান্য সাফল্যের কাহিনি (Success Story)
জিতেন্দ্র মহারাণা প্রথমে ছোট ট্যাঙ্কে কেঁচো সার বা ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। শুরুটা ছিল একেবারেই ক্ষুদ্র, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এর চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকে। সেই চাহিদা মেটাতে তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেন এবং খোলা মাঠে বৃহৎ আকারে উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেন। তাঁর জৈব সারের বিশেষত্ব হলো, এটি তৈরি করতে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসে স্থানীয় গরুর গোবর থেকে, আর বাকি ১০ শতাংশে ব্যবহৃত হয় কাঠের টুকরো ও শুকনো পাতা। এই মিশ্রণে তৈরি সার গঠনগত দিক থেকেও শক্তিশালী হয় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে (Success Story)।
আরও পড়ুন:ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে পরিস্থিতি! বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছে PoK, পাকিস্তান থেকে মিলবে “আজাদি”?
‘খুশি অ্যাগ্রো’ আজ কেবল নবরংপুরেই সীমাবদ্ধ নয়। কিলোপ্রতি ছোট প্যাকেজ থেকে শুরু করে ৫০ কিলো পর্যন্ত প্যাকেটে ভার্মিকম্পোস্ট তিনি বাজারজাত করছেন। এর চাহিদা এখন ছড়িয়ে পড়েছে কালাহান্ডি, কোরাপুট, বলাঙ্গীর এমনকি প্রতিবেশী ছত্তিশগড় পর্যন্ত। তাঁর পণ্যের মান ও নির্ভরযোগ্যতা দূর-দূরান্তে কৃষকদের আস্থা অর্জন করেছে (Success Story)।
এই সাফল্য কেবল আর্থিক লাভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জিতেন্দ্র মহারাণা তাঁর উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখছেন। তাঁর খামারে বর্তমানে ১৫ জনেরও বেশি মানুষ পূর্ণকালীন কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে অনেকে আগে বেকার ছিলেন। ফলে শুধু নিজের নয়, তিনি তাঁর গ্রাম এবং আশপাশের মানুষের জীবনধারাতেও পরিবর্তন এনেছেন। এছাড়া, জিতেন্দ্র এখন প্রশিক্ষক এবং পরামর্শদাতার ভূমিকাও পালন করছেন। তিনি নিয়মিতভাবে কর্মশালা আয়োজন করে অন্যান্য কৃষকদের জৈব সার তৈরির পদ্ধতি শেখাচ্ছেন, ধাপে ধাপে কেঁচো সার বানানোর কৌশল বোঝাচ্ছেন এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতা তৈরি করছেন (Success Story)।
আরও পড়ুন: আরও বেশি জল ছাড়ছে DVC, হাওড়া-হুগলি-সহ নদী সংলগ্ন এলাকা প্লাবনের আশঙ্কা
জিতেন্দ্রর গল্প প্রমাণ করে দেয় যে ছোট একটি উদ্যোগও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। সরকারি পরিকল্পনার সুযোগ ও নিজের শ্রম, অধ্যবসায় এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তিনি এক বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছেন। তাঁর জৈব সার মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করছে, ফসলের স্বাদ ও মান বাড়াচ্ছে এবং দীর্ঘস্থায়িত্বও নিশ্চিত করছে। ফলে উপকৃত হচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তারাও। এখন তিনি তাঁর ব্যবসা আরও বিস্তার করার পরিকল্পনা করছেন। তরল জৈব সার বা লিকুইড বায়ো-ফার্টিলাইজার বাজারে আনার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন (Success Story)।
মাত্র ২,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করে আজ ৩০ লক্ষ টাকার সাফল্যের গল্প গড়ে তোলা জিতেন্দ্র মহারাণা প্রমাণ করেছেন যে, কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভাবন, স্থায়িত্ব ও উদ্যোক্তা মনোভাবই ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি (Success Story)।