দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে কোভিড গবেষণায় দেহদান জ্যোৎস্না দেবীর, অনন্য নজির কলকাতার

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এই মুহূর্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রীতিমতো বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ। আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, করোনার কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছে না অনেকেই। এই ভয়ঙ্কর মহামারী থেকে বাঁচতে একদিকে যেমন দরকার ওষুধ, ভ্যাকসিন, সতর্কতা। তেমনি ভীষণভাবে প্রয়োজন গবেষণা। ভাইরাসকে আরও কাছ থেকে না জানলে আগামী দিনে তা কত মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া মুশকিল। সেই লড়াইয়ে এবার বড় যোগদান রাখলো কলকাতা। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের ওপর গবেষণার জন্য নিজের দেহ দান করে এই আন্দোলনের পুরোধা হয়েছিলেন ব্রজ রায়। মৃত্যুর আগে সংস্থার কাছে দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই মৃতদেহের অ্যাটোপ্সি করে অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন গবেষকরা।

এবার সেই লড়াইয়ে বড় যোগদান রাখলেন জ্যোৎস্না দেবী। এরই সাথে সাথে দেশের প্রথম মহিলা দেহদান করায়, অনন্য নজির গড়ল কলকাতা। মৃত্যুকালে জ্যোৎস্না দেবীর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তবু পরিবারের সকলের কাছেই তিনি ছিলেন ‘সুপার ওম্যান’। এবারও অনন্য নজির গড়ে গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে গণদর্পণ নামে এক সংগঠনকে দেহ দানের অঙ্গীকার করেন তিনি। তার সেই শেষ ইচ্ছা পালন করতে পাশে দাঁড়ালো পরিবার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গবেষণার স্বার্থে নিজের দেহ দান করে গেলেন চিকিৎসক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীও। এই নিয়ে এখনো পর্যন্ত গবেষণার স্বার্থে মোট তিনজন দেহ দান করলেন গোটা পশ্চিমবঙ্গে।

তবে বড় যোগদান অবশ্যই জোৎস্না দেবীর। কারণ গোটা ভারতবর্ষে এখনো পর্যন্ত দেহদান করেননি কোন মহিলা। সে ক্ষেত্রে নতুন অনেক কিছুই জানার সম্ভাবনা রয়েছে গবেষকদের। আরজিকর মেডিকেল কলেজে ইতিমধ্যেই অ্যাটোপ্সি করা হয়েছে তার। ১৯২৭ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্ম জ্যোৎস্না দেবীর। পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি অভাবের তাড়নায়। তবে সে সময়ও তিনি ছিলেন ফ্যামিলির আর্নিং মেম্বার। অপারেটরের চাকরি করেছেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া টেলিকমে। শুধু তাই নয় ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী হিসেবেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অংশ নিয়েছিলেন ১৯৪৬ এর ‘ অল ইন্ডিয়া পােস্ট অ্যান্ড টেলিকম স্ট্রাইক ‘ – এও।

পরিবারের তরফে তার নাতনী রঞ্জিনি বসু জানান, গত ১৪ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন জ্যোৎস্না দেবী। কিন্তু ক্রমাগত শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে তার। শেষ পর্যন্ত দুদিনের দীর্ঘ লড়াই শেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে আগে থেকেই তিনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তার মৃত্যুর পর দেহ যেন গবেষণার কাজে লাগানো হয়। সেই সূত্র ধরেই আরজিকর মেডিকেল কলেজকে দেহ দান করা হয় পরিবার তরফে। এদিন টুইটারে রঞ্জনি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখেন, বরাবরই আমার ঠাকুরমা একজন সুপার ওম্যান। মৃত্যুর পরেও সে কথা আরেকবার প্রমান করে দিয়ে গেলেন তিনি।


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর