বাংলা হান্ট ডেস্কঃ অভিযোগ ছিল ‘আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠন ওই জেলার বহু মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরপরেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে সিআইডি। বিগত তিন বছর ধরে ওই আর্থিক তছরুপের (Money siphoning case) তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার পরও তার কোনও কিনারা করতে পারেনি সিআইডি (CID)।
গত অগাস্ট মাসে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) এজলাসে এই মামলা উঠলে তদন্তকারীদের ভূমিকাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। আর এদিন এই মামলায় রাজ্যকেই ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল আদালত। গত শুনানির সময় CID তদন্তের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআই এর হাতে মামলার তদন্তভার তুলে দিয়েছিলেন বিচারপতি। এদিন বিচারপতির সেই রায় পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় সিআইডি। সিআইডির আরজি ছিল তারাই এই মামলার তদন্ত করুক।
তবে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার আরজি খারিজ করে দেন বিচারপতি। অন্যদিকে সিবিআই জানায় আদালতের নির্দেশের পরও তাদের হাতে এই মামলার কোনও নথি তুলে দেয়নি সিআইডি। যা শুনে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি। এরপরই আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে সমস্ত নথি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন জাস্টিস গাঙ্গুলি।
আরও পড়ুন: মমতার এক ঘোষণায় মহা বিপাকে রাজ্যের সমস্ত BJP বিধায়কেরা! এবার কী করবেন শুভেন্দু?
এরপরও আদালতের নির্দেশ না মানলে স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে পাঠানো হবে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। সিআইডি কে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি বলেন, ‘গরিবদের টাকাকারা আত্মসাৎ করেছে আমি জানি। যারা সাইকেল চড়ত, গরিব মানুষের টাকা মেরে তারা এখন গাড়ি চড়ে ঘুরছে।’
সিআইডি গোয়েন্দাদের ধমক দিয়ে বিচারপতি বলেন, ‘কোর্টের সঙ্গে খেলা হচ্ছে? আপনারা (সিআইডি) তো এত দিন তদন্ত করলেন। কেন কিছু হল না? তদন্তের অগ্রগতি হয়নি বলেই সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল।’ এরপরই প্রয়োজনে তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবকে ডেকে পাঠাবেন বলে মন্তব্য করেন।
বিচারপতির মন্তব্য, ” ৫০ কোটির দুর্নীতি হয়েছে। গ্রামের গরিব মানুষরা সব্জি বিক্রি করে ওই টাকা রেখেছিল। প্রতারণা করা হয়েছে। ওদের টাকা লুঠ করা হয়েছে।” এদিন সিআইডির হাত থেকে মামলা সরিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেন বিচারপতি। ইডির ওপর ভরসা থেকে তিনি বলেন, “এরা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন গ্রেফতার করুন। হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। তাছাড়া কোনও উপায় নেই। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শুরু করুন।”
আরও পড়ুন: এবার ED অফিসারদের হেফাজতে নেবে কলকাতা পুলিশ? রক্ষাকবচ চেয়ে হাইকোর্টে ছুটলেন গোয়েন্দারা
কী অভিযোগ ছিল? আর্থিক তছরুপের মামলায় মামলাকারীদের মধ্যে কল্পনা দাস সরকারের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে ২১ হাজার ১৬৩ জন টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ মোট ৫০ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের থেকে নেওয়া ওই টাকা বাজারে ঋণ হিসাবে খাটিয়ে পরে সঠিক সময়ে সকলে ফেরত পাবেন জানানো হয়েছিল সেই সংস্থার তরফে। টাকা ফেরত পাওয়ার সময় হলে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন, সমিতিই ‘বিলুপ্ত’ হয়ে গিয়েছে। এরপরেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে CID. অভিযোগ গত তিন বছর ধরে তদন্ত করেও ঠিক কাদের কাছে ওই টাকা ঋণ হিসেবে পৌঁছেছে তার কিনারা করতে পারেনি তদন্তকারীরা।
ওই সংস্থার পাঁচ কর্তাকে গ্রেফতার করা হলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। মামলাকারীদের অভিযোগ, যদি সত্যিই ঋণ দেওয়া হত, তাহলে গ্রহীতাদের নাম থাকত। তবে CID দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালিয়েও কারও নামের কিনারা করতে পারেনি। মামলাকারীদের অভিযোগ, তাদের টাকা অন্যত্র পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর গত মাসে এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে উঠলে সমস্ত ঘটনা শুনে আদালতের রোষের মুখে পড়ে CID-র ভূমিকা। সিআইডির হাত থেকে তদন্তের ভার সিবিআই এবং ইডিকে (CBI-ED) দিয়েছিলেন বিচারপতি।