বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাংলার আধুনিক সংগীত জগতে কবীর সুমন এক ইতিহাসের নাম। ৯০ এর দশকে তাঁর একের পর এক গান পাল্টে দিয়েছে বাংলা গানের সংজ্ঞা। সংগীত জীবন ছাড়াও ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন নিয়েও বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ‘তোমাকে চাই’ এর স্রষ্টা। কিছুদিন আগেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল বর্ষিয়ান এই সংগীত শিল্পীকে।
যদিও বর্তমানে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এখন সুস্থই রয়েছেন তিনি। তবে সম্প্রতি কবীর সুমন ফেসবুকে লিখলেন যে তিনি আর পশ্চিমবঙ্গে থাকতে চান না। শেষ জীবনটা তিনি থাকতে চান বাংলাদেশে।ফেসবুকে কবীর সুমন লিখেছেন, ‘এই কথা আমি আগেও অনেক বার বলেছি। তাও ফের বলছি কারণ আমার কথায় কোনও কাজ হচ্ছে না। এমন নয় যে সনাতনধর্মীয় নামধারী কোনও বঙ্গজ আমায় সম্মান করেন না। মুষ্টিমেয় কিছু বঙ্গজ করেন।”
আরোও পড়ুন : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান! এবার ট্রেন চলল নশিপুর রেল ব্রিজেও, উত্তরবঙ্গ সফর হবে এখন আরোও সহজ
তার কথায়, “বড্ড বেশি সংখ্যক সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ আমায় ঢাক পিটিয়ে ঘৃণা করেন, এবং তা জাহির করে সনাতনী সুখ পান। আর এক শ্রেণীর সনাতন-বঙ্গজ আছে যারা আমায় কবীর নামে ডাকতে চায় না। এরা, যা দেখেছি “বামপন্থী”। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমার নাম ভারতের সংবিধান মোতাবেক, ঘোষিতভাবে কবীর সুমন। ফার্স্ট নেম কবীর। সার্নেম সুমন’।
এর সাথে সুমনের বক্তব্য, ‘আমার আয়কর ফাইল র্যাশন কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার আই ডি, আধার কার্ড সর্বত্র এই নামটাই আছে। এই নামে আমি ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে লড়ে মাননীয় সিপিআইএম সদস্য ডক্টর সুজন চক্রবর্তীকে হারিয়ে দিয়ে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলাম। ভারতের অন্তর্ভুক্ত পশ্চিম বাংলায় তা সকলের জানার কথা।”
তার সংযোজন , “সিপিআইএম করা বঙ্গজরা আমায় আমার বর্জিত নামে ডাকেন। শুধরে দিলেও শুধরে নেন না। আর নকশালপন্থী দলের বঙ্গজ নেতাও (নামে সনাতনধর্মীয়) আমায় ভুলেও কবীর সুমন বলেন না, কবীর তো নয়ই। তিনি অবিরাম সুমন সুমন করে যান। এদিকে সকলেই নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার বলতে গদগদ। আর একদল আছে, যারা আমায় গানওলা বলে ডাকে। কী বলি’।
আরোও পড়ুন : ‘পাগড়ি মানেই খলিস্তানি নয়’, শিখ পুলিশ অফিসারের সমর্থনে সোচ্চার মমতার কড়া হুঁশিয়ারি বিজেপিকে
তারপর খানিকটা অভিমানের সুরে কবীর সুমন লেখেন, ‘যা বুঝেছি, আমায় নির্দ্বিধায় সম্মান করেন যাঁরা, প্রাপ্য সম্মানটুকু দেন যাঁরা তাঁরা সদলবলে বাংলাদেশের নাগরিক। পশ্চিম বঙ্গের সনাতনধর্মীয় বঙ্গজদের মতো বাংলাদেশের কেউ আমায় সমানে, যে কোনও উপায়ে অপমান করে যান না। আর মাসখানেক পরে আমি ৭৫ পুরো করে ৭৬ এ পড়ব। কলকাতা আমার প্রথম প্রেম।কলকাতা নামটা আমার গানে যতবার এসেছে আর কারুর কবিতায় গানে তা আসেনি।’
তার কথায়, ‘আমায় যাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরা সকলেই কলকাতার সনাতনধর্মীয় বঙ্গজ। তাঁদের ছেড়ে থাকতে পারব না। কিন্তু, কারুর কোনও ক্ষতি না করা সত্ত্বেও সমানে অপমানিত হতে হতে এবারে আমি চাইছি এই দেশটা, মায় এই শহরটাও ছেড়ে চলে যেতে। আমার শেষ জীবন আমি যদি বাংলাদেশে থেকে আমার মাভাষার সেবা করতে পারতাম, বাংলা খেয়াল শেখাতে পারতাম আমার আজকের স্বাস্থ্য যতটা অনুমতি দেবে ততটা অন্তত।’