‘উঠোনে রক্তে ভেজা ছেলের দেহ, কাছেও যেতে পারলাম না’!, আর্তনাদ পুলিসের গুলিতে মৃত মৃত্যুঞ্জয়ের বাবার

বাংলা হান্ট ডেস্ক : ৬৫ বছরের বৃদ্ধ তিনি। কাঁধে রয়েছ একটা গামছা। সেই গামছা দিয়েই মুছছেন চোখের জল। তিনি শ্রীকৃষ্ণ বর্মণ। তাঁরই ৩৩ বছর বয়সি ছেলে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণ (Mrityunjay Barman Murder Case) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বৃহস্পতিবার। তাঁর চোখের সামনে। সে রাতের হাড়হিম করা দৃশ্যের কথা মনে করে চোখের জল বাঁধ মানছে বৃদ্ধ শ্রীকৃষ্ণবাবুর। ভেজা চোখে হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে অভিযোগ করছেন, ‘পুলিস আমার ছেলেটাকে মেরে দিল।’

গলা থেকে দিয়ে ডুকরে ওঠা কান্নটাকে একটু সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম যে পাচারকারীকে ধরতে বিএসএফ অভিযান চালাচ্ছে। চেঁচামেচি শুনতে পাই। আমি বের হতে যাই, তবে আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে আটকে দেন। এর কিছুক্ষণ পরে আমি দু’বার গুলি চলার আওয়াজ শুনলাম। আমাকে তারপর বলা হল যে পুলিস মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি মেরে চলে গিয়েছে। ৩০ ফুট দূরে রক্তে ভেসে যাওয়া আমার ছেলের কাছে যেতে পর্যন্ত পারলাম না। সারা রাত আমি শুধু কেঁদে গেলাম।’

kaliaganj

মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী গৌরি বর্মণও স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পাঁচ বছরের শিশু, অসুস্থ শ্বশুরকে হতাশ তিনি। তা বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন তিনি। এতদিন পরিবারে দায়িত্ব মৃত্যুঞ্জয়ের ওপরই ছিল। এই পরিস্থিতিতে গৌরি বলেন, ‘আমি পুলিসের সেই পাশবিক চেহারা ভুলতে পারছি না। আমার স্বামীকে গুলি করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেল তারা। আমার স্বামীকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি পুলিস।’

তারপর থেকে পুলিস আর গ্রামে ঢোকার সাহস দেখাতে পারেনি। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ ফেরাতে এসেও গ্রামে ঢোকেনি পুলিস। এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের দেহ দাহ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের সদস্যরা। দেহ তাঁরা সমাধিস্থ করে রেখেছেন। আদালত যদি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং তাতে ফের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়, সেই আশা থেকেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত বলে জানা যাচ্ছে।

মৃত্যুঞ্জয়ের গ্রামের ৩৫ কিমি দূরেই রয়েছে আরও একটি গ্রাম। থমথমে সেই গ্রামও। এই গ্রামেরই ১৭ বছর ধর্ষিতা বয়সি নাবালিকা। মৃত নাবালিকার বাবা বিলাশু বর্মণ কর্মসূত্রে নেপালে থাকেন। এখন তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। মৃত নাবালিকার মা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁরাও নাবালিকার দেহ দাহ করেননি। ভবিষ্যতে যদি ফের ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়ে, সেই আশায় মেয়ের দেহ সমাহিত করে রেখেছেন বিলাশুবাবু।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর