বাংলাহান্ট ডেস্ক: কেরলের মুহাম্মদ বিন ফারুকের সাফল্যের গল্প (Success Story) যেন এক অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত। ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে পাওয়া কয়েকটি ‘গাপ্পি’ মাছই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সেই শখই আজ ২ কোটি টাকার এক সফল অর্নামেন্টাল ফিশ কোম্পানিতে রূপ নিয়েছে। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই ফারুক হয়ে উঠেছেন ভারতের অন্যতম তরুণ ফিশ উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি ফিশ জেনেটিক্সে পিএইচডি করছেন এবং নিজের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে অর্নামেন্টাল ফিশ প্রজনন ও রফতানিতে নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছেন।
মুহাম্মদ বিন ফারুকের সাফল্যের গল্প (Success Story)
কেরলের কল্লাম জেলার বাসিন্দা ফারুকের মাছের প্রতি ভালোবাসা শুরু হয়েছিল শৈশবেই। মায়ের উপহার দেওয়া গাপ্পি মাছ কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। ছোট ছোট কাচের বোতলে মাছ পালন করতেন তিনি, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই শখ এক ব্যবসায়িক রূপ নেয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তাঁর ঘরে প্রায় ১০০টি অ্যাকোয়ারিয়াম ছিল। মাছ পালনের নেশা তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের দিকে নিয়ে যায়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ফিশারিজ বিষয়ে ভোকেশনাল ট্রেনিং নেন। এরপর দুই বছর সময় নিয়ে নিজের স্বপ্নের ব্যবসার ভিত গড়ে তোলেন (Success Story)।
আরও পড়ুন:বিরল খনিজ নিয়ে চিন-আমেরিকা সংঘাত তুঙ্গে, পাশে ভারতকে চাইছে ওয়াশিংটন
মুহাম্মদের এই সাফল্য শুধু শখ বা পরিশ্রমের ফল নয়, এর পেছনে আছে গভীর একাডেমিক জ্ঞানও। তিনি ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকোয়াকালচারে স্নাতক ডিগ্রি, অর্নামেন্টাল ফিশারিজে ডিপ্লোমা ও পিজি ডিপ্লোমা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশারিজে এমএসসি সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ফিশ জেনেটিক্সে গবেষণা করছেন। তাঁর কথায়, এই শিক্ষা ও গবেষণাই তাঁকে মাছের প্রজনন প্রযুক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জেনেটিক উন্নয়নের মতো বিষয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে সাহায্য করেছে (Success Story)।
তাঁর প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগই মূল আকর্ষণ। বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন ৭,৫০০ বর্গফুটের এক হ্যাচারি, যেখানে ৪৬ লক্ষ লিটার পানির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্কে সেমি-অটোমেটিক সিস্টেমে মাছ চাষ হয়। এছাড়া রয়েছে ১২,০০০ বর্গফুটের ইনডোর ফার্ম, যেখানে মাছগুলো ব্যবসায়িক আকারে পৌঁছানো পর্যন্ত লালন-পালন করা হয়। রফতানির আগে ১,৫০০ বর্গফুটের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ইউনিটে রাখা হয় মাছগুলোকে। বর্তমানে তিনি ৪৩ প্রজাতির অর্নামেন্টাল মাছ উৎপাদন করছেন, বছরে উৎপাদন ক্ষমতা ২০–২৫ লক্ষ বেবি ফিশ এবং রফতানির জন্য প্রস্তুত হয় ১০–১২ লক্ষ মাছ (Success Story)।
আরও পড়ুন:ইন্টারনেট ছাড়াই অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে টাকা! নর্মাল কারেন্সির থেকে কতটা আলাদা RBI-র eRupee?
মুহাম্মদ বিন ফারুকের ব্যবসা এখন শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয়; তাঁর মাছ পৌঁছায় চেন্নাই, মুম্বই, কলকাতার পাইকারি বাজার ছাড়িয়ে সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোতেও। তাঁর সংস্থার সাফল্যের মূলমন্ত্র—গুণমান ও পরিচ্ছন্নতা। ভারতীয় বাজারে পাওয়া ফিড মানসম্মত নয় বলে তিনি নিজস্ব ‘ইন-হাউস’ ফিড তৈরি করেন, যাতে থাকে সামুদ্রিক খাবার ও চিংড়ি পাউডার। প্রতিটি প্রজনন চক্রের পর ট্যাঙ্ক জীবাণুমুক্ত করেন যাতে দূষণ না ঘটে (Success Story)।
এই উদ্যোগের জন্য তিনি ইতিমধ্যেই বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অর্নামেন্টাল ফিশ রফতানিতে ভারতের অবস্থান আরও শক্ত করা এবং পরিবেশবান্ধব মাছচাষের প্রচলনকে উৎসাহ দেওয়া। মুহাম্মদ বিন ফারুকের এই যাত্রা প্রমাণ করে, শখ যদি জ্ঞানের সঙ্গে মিশে যায়, তবে সেটিই হয়ে উঠতে পারে কোটি টাকার সাফল্যের চাবিকাঠি (Success Story)।